উত্তর ভারতের পরাক্রমশালী রাজা পুরু বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করেও আলেকজান্ডারের কাছে পরাজিত হন। পুরুকে বন্দী অবস্থায় তার সামনে আনা হলো। আলেকজান্ডার পুরুকে প্রশ্ন করেছিলেন। যুদ্ধবন্দী হিসেবে তুমি আমার কাছে কিরকম আচরণ প্রত্যাশা কর ? পুরু প্রচন্ড আত্মসম্মান নিয়ে জবাব দিয়েছিলেন - রাজা বন্দী হলেও রাজাই থাকে। আমি রাজা হিসাবে একজন রাজা আরেকজন রাজার কাছে যেরকম আচরণ প্রত্যাশা করে তোমার কাছে সেই আচরণই প্রত্যাশা করি।
নিজের আত্মসম্মান বিসর্জন না দিয়ে ও পুরু আলেকজান্ডারকে রাজা হিসাবে সম্মোধন করলেন এবং আলেকজান্ডার এর আত্মসম্মানকে একই সঙ্গে চ্যালেঞ্জ জানালেন। আলেকজান্ডার পুরুকে তার রাজ্য ফেরত দিয়েছিলেন। বাকি জীবন আলেকজান্ডার এর বন্ধুপ্রতিম রাজা হিসাবে রাজ্য শাসন করেছিলেন পুরু । আত্মমর্যাদাবোধের বাড়াবাড়ি হয়ে গেলে সেটাকেই বোধ হয় বলে ইগো। একের পর এক রাজ্য জয় করতে করতে আলেকজান্ডারকে যেমন ইগোতে পেয়ে বসেছিল। তার পৃথিবী জয় করার বাসনার খেসারত দিতে হয়েছে লক্ষ লক্ষ সেনা -সাধারণ মানুষ কে জীবন দিয়ে।
আলেকজান্ডার বাংলাদেশের (তখন গঙ্গরিডই) কাছে এসে প্রথম পরাজয়ের গন্ধ পেতে শুরু করেন। পুরুর সাথে জিতলেও প্রচুর লোকক্ষয় হয়েছিল গ্রিক দের। বাংলার নন্দ রাজারাও পুরুর তুলনায় শৌর্য -বীর্যে কম নন। গ্রিক সৈন্য সামন্ত বিদ্রোহ করতে শুরু করে। পূর্বদিকে আর রাজ্যজয়ের ইচ্ছা ত্যাগ করতে হয়েছিল আলেকজান্ডারকে । তবে ইগো ছাড়তে পারেন নি। আরব ভুখন্ডে অভিযানের পরিকল্পনা নিয়ে ব্যাবিলন এর পথে রওনা দেন। পথেই তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুশয্যায় শুয়ে হয়ত তার ইগো থেকে মুক্তি পেতে ইচ্ছে হয়েছিল। তিনি তার কাছের মানুষদের কাছে নির্দেশ দিয়ে যান মৃত্যুর পর তাঁর তিনটি ইচ্ছা যেন পূরণ করা হয়। ইচ্ছা তিনটি ছিল-
১. তার শবদেহ যেন চিকিত্সকেরা বহন করে সমাধিস্থলে নিয়ে যান।
২. তার নিজস্ব সম্পদ যেন রাস্তার দুপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেওয়া হয়।
৩. তার হাত এমনভাবে যেন ঝুলিয়ে দিয়া হয় যাতে বাইরে থেকে সবাই তার খালি হাত দেখতে পায়।
প্রিয়জনেরা এমন ইচ্ছার কারণ জানতে চাইলে আলেকজান্ডার বলেছিলেন - পৃথিবীর সবচে ক্ষমতাধর মানুষটিকেও দেশের সেরা চিকিত্সকেরা মৃত্যুযাত্রা থেকে ফেরাতে পারেন নি, সেই ক্ষমতা ধর মানুষটি অর্জিত সম্পদের এক কানাকড়িও সঙ্গে নিয়ে যেতে পারেন নি , খালি হাতেই ফিরে যেতে হয়েছে - এই দৃশ্য টি যেন সবাই দেখতে পায় সে জন্যেই এই ইচ্ছেমালা। যুদ্ধ জিততে জিততে ক্লান্ত আলেকজান্ডার মৃত্যুশয্যায় শুয়ে নিজের ইগো থেকে মুক্তি পেতে চেয়েছিলেন। অনুশোচনার আগুনে পুড়েছিলেন।
ইতিহাসের পথ বেয়ে আরেকটু নেমে আসি। বাংলার বিহার উড়িষ্যার প্রথম স্বাধীন নবাব মুর্শিদ কুলি খান। তার দরবারে সিংহাসন বিনা আর কোনো আসন নেই। দরবারে তিনি ছাড়া সবাই দাড়িয়ে থাকেন।নিজে ধর্মান্তরিত শিয়া মুসলমান। দরবারে হিন্দু সদস্য রা মুসলমানদের পিছনে দাড়াতে বাধ্য। তবে জমিদারী বরাদ্দের ক্ষেত্রে হিন্দু দের প্রতি পক্ষপাত করেন । কারণ হিন্দু জমিদার খাজনা দিতে টালবাহানা কম করে । ন্যায়পরায়নতা নিয়ে কারো অভিযোগ নেই । সামান্য প্রজার নালিশের বিচারে অপরাধী সাব্যস্ত হওয়াতে নিজের ছেলেকে মৃত্যুদন্ড দিলেন । আওরঙ্গজেব কে পিতার মত সম্মান করতেন। ক্ষয়িষ্ণু মুঘল সাম্রাজ্যে আওরঙ্গজেব এর অথর্ব উত্তরাধিকারীদের প্রভুত্ব মেনে নিয়েছেন বিনা প্রতিবাদে । কিন্তু ফররুখ শিয়ার যখন ব্রিটিশদের অবাধে বানিজ্য করার সুযোগ দিয়ে ফরমান জারি করলেন , মুর্শিদ কুলি খান সেই আদেশ মেনে তো নেন ই নি উল্টো দিল্লী তে খাজনা পাঠানো বন্ধ করে দিলেন।সামান্য উপঢৌকন পাঠাতেন বছরে একবার । বাংলার নবাব তখন সম্পদে আর শক্তিতে এতটাই প্রবল , তিনি যে বিদ্রোহ করে বসেন নাই তাতেই মুঘল সম্রাট হাঁফ ছেড়ে বেচেছেন। নবাবের উপস্থিতিতে নবাব ছাড়া অন্য কাউকে সালাম বা কুর্নিশ করা ছিল নিষেধ । নিজের শাসনামলে অনেক মন্দির ধংস করেছিলেন। শেষ জীবনে এসে নিজের ঔধ্বত্য নিয়ে অনুশোচনায় পড়েন। ইসলাম প্রতিষ্ঠার নামে যেভাবে মন্দির ধংস্ করেছিলেন একসময়; তেমনি করে মন্দির পুন প্রতিষ্ঠা করা শুরু করেন। মৃত্যুর আগে নিজের ইচ্ছের কথা জানিয়ে যান স্ত্রীর কাছে। নিজের বানানো মসজিদের সিড়ির নিচে যেন তাকে কবর দেওয়া হয়। সাধারণ মানুষ তার কবরে পা ফেলে মসজিদে প্রবেশ করে। বিশ্বাস করতে চেয়েছিলেন এতে হয়ত তার পাপমোচন হবে। মুর্শিদাবাদের কাটরা মসজিদে ঠিক সিড়ির নিচেই নবাব এবং তার স্ত্রীর কবর এখনো আছে।
ফিরে আসি এই সময়ে । আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রীর ইগো এতই প্রবল তিনি আমেরিকা বিশ্বব্যাঙ্ক কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে মাল্টিবিলিয়ন ডলার প্রজেক্ট শুরু করেন । তার ক্ষমতা এতই প্রবল যে তার শাসনামলে বিরোধী দল সরকারী দল এক টেবিল ইফতার খায় । ৩০০ আসনের সংসদে ১৫৩ আসনে তার দলের সামনে দাড়াতেই কারো সাহস হয় না। একটু যারা উচ্চবাচ্য করে পুলিশ তাদের দরজায় তালা ঝুলিয়ে দেয় , হাসপাতালে নিয়ে চিকিত্সা করে , জেল খানা তে পুরে। তার ডাকে একসময় লগি বৈঠা নিয়ে নেমে ধ্বংসজজ্ঞ চালিয়েছিল অনুগতরা। গান পাউডার ঝলসে দিয়েছিল মানুষের আস্ত শরীর।
আমার দেশের সাবেক প্রধান মন্ত্রী। মাঠে আন্দোলন করে স্বৈরশাসক কে পরাজিত করেছেন । এখন গণতান্ত্রিক স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে লড়ছেন।মানুষ ফ্রি তে আর সেভাবে আন্দোলনে নামে না , আজকাল সবাই সুবিধা চায়। তিনি আন্দোলন থেকে পিছু হটেন না। ইগো তার ও কম নয়। তাকে ফোন দিলে তিনি জবাব দেন "কেন আগে দেন নাই ? সো হরতাল চলবে ....। " সুনাম আছে স্বৈরাচার হটাতে তিনি আপসহীন [ আদি বাংলা ভাষায় অনেকে আপসহীন -এর প্রতিশব্দ করেন "ঘাউরা " ] তার নির্দেশে সুযোগসন্ধানীদের দল পুড়িয়ে দিচ্ছে মানুষের শরীর, হাত- পা হৃত্পিণ্ড।
কিউরিয়াস মাইন্ড ওয়ান্টস টু নো ওভার এন্ড ওভার -একটুও কি তার মনে হয়না তিনি একটু বুদ্ধি খাটিয়ে আন্দোলন করলে মানুষের জীবন গুলো বেচে যেতে পারত। আন্দোলনের অহিংস পদ্ধতিগুলো কি তিনি কখনো প্রয়োগ করে দেখেছেন কাজ হয় কিনা ?
তথ্যসূত্র :
উইকিপিডিয়া , বাংলাপিডিয়া , মুরুব্বিয়ানে কেরাম ,
[১] http://countrystudies.us/bangladesh/58.htm
[২] http://archive.thedailystar.net/newDesign/news-details.php?nid=131583
**http://blog.priyo.com/md-rowshon-alam/39738.html
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
নিজের আত্মসম্মান বিসর্জন না দিয়ে ও পুরু আলেকজান্ডারকে রাজা হিসাবে সম্মোধন করলেন এবং আলেকজান্ডার এর আত্মসম্মানকে একই সঙ্গে চ্যালেঞ্জ জানালেন। আলেকজান্ডার পুরুকে তার রাজ্য ফেরত দিয়েছিলেন। বাকি জীবন আলেকজান্ডার এর বন্ধুপ্রতিম রাজা হিসাবে রাজ্য শাসন করেছিলেন পুরু । আত্মমর্যাদাবোধের বাড়াবাড়ি হয়ে গেলে সেটাকেই বোধ হয় বলে ইগো। একের পর এক রাজ্য জয় করতে করতে আলেকজান্ডারকে যেমন ইগোতে পেয়ে বসেছিল। তার পৃথিবী জয় করার বাসনার খেসারত দিতে হয়েছে লক্ষ লক্ষ সেনা -সাধারণ মানুষ কে জীবন দিয়ে।
আলেকজান্ডার বাংলাদেশের (তখন গঙ্গরিডই) কাছে এসে প্রথম পরাজয়ের গন্ধ পেতে শুরু করেন। পুরুর সাথে জিতলেও প্রচুর লোকক্ষয় হয়েছিল গ্রিক দের। বাংলার নন্দ রাজারাও পুরুর তুলনায় শৌর্য -বীর্যে কম নন। গ্রিক সৈন্য সামন্ত বিদ্রোহ করতে শুরু করে। পূর্বদিকে আর রাজ্যজয়ের ইচ্ছা ত্যাগ করতে হয়েছিল আলেকজান্ডারকে । তবে ইগো ছাড়তে পারেন নি। আরব ভুখন্ডে অভিযানের পরিকল্পনা নিয়ে ব্যাবিলন এর পথে রওনা দেন। পথেই তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুশয্যায় শুয়ে হয়ত তার ইগো থেকে মুক্তি পেতে ইচ্ছে হয়েছিল। তিনি তার কাছের মানুষদের কাছে নির্দেশ দিয়ে যান মৃত্যুর পর তাঁর তিনটি ইচ্ছা যেন পূরণ করা হয়। ইচ্ছা তিনটি ছিল-
১. তার শবদেহ যেন চিকিত্সকেরা বহন করে সমাধিস্থলে নিয়ে যান।
২. তার নিজস্ব সম্পদ যেন রাস্তার দুপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেওয়া হয়।
৩. তার হাত এমনভাবে যেন ঝুলিয়ে দিয়া হয় যাতে বাইরে থেকে সবাই তার খালি হাত দেখতে পায়।
প্রিয়জনেরা এমন ইচ্ছার কারণ জানতে চাইলে আলেকজান্ডার বলেছিলেন - পৃথিবীর সবচে ক্ষমতাধর মানুষটিকেও দেশের সেরা চিকিত্সকেরা মৃত্যুযাত্রা থেকে ফেরাতে পারেন নি, সেই ক্ষমতা ধর মানুষটি অর্জিত সম্পদের এক কানাকড়িও সঙ্গে নিয়ে যেতে পারেন নি , খালি হাতেই ফিরে যেতে হয়েছে - এই দৃশ্য টি যেন সবাই দেখতে পায় সে জন্যেই এই ইচ্ছেমালা। যুদ্ধ জিততে জিততে ক্লান্ত আলেকজান্ডার মৃত্যুশয্যায় শুয়ে নিজের ইগো থেকে মুক্তি পেতে চেয়েছিলেন। অনুশোচনার আগুনে পুড়েছিলেন।
ইতিহাসের পথ বেয়ে আরেকটু নেমে আসি। বাংলার বিহার উড়িষ্যার প্রথম স্বাধীন নবাব মুর্শিদ কুলি খান। তার দরবারে সিংহাসন বিনা আর কোনো আসন নেই। দরবারে তিনি ছাড়া সবাই দাড়িয়ে থাকেন।নিজে ধর্মান্তরিত শিয়া মুসলমান। দরবারে হিন্দু সদস্য রা মুসলমানদের পিছনে দাড়াতে বাধ্য। তবে জমিদারী বরাদ্দের ক্ষেত্রে হিন্দু দের প্রতি পক্ষপাত করেন । কারণ হিন্দু জমিদার খাজনা দিতে টালবাহানা কম করে । ন্যায়পরায়নতা নিয়ে কারো অভিযোগ নেই । সামান্য প্রজার নালিশের বিচারে অপরাধী সাব্যস্ত হওয়াতে নিজের ছেলেকে মৃত্যুদন্ড দিলেন । আওরঙ্গজেব কে পিতার মত সম্মান করতেন। ক্ষয়িষ্ণু মুঘল সাম্রাজ্যে আওরঙ্গজেব এর অথর্ব উত্তরাধিকারীদের প্রভুত্ব মেনে নিয়েছেন বিনা প্রতিবাদে । কিন্তু ফররুখ শিয়ার যখন ব্রিটিশদের অবাধে বানিজ্য করার সুযোগ দিয়ে ফরমান জারি করলেন , মুর্শিদ কুলি খান সেই আদেশ মেনে তো নেন ই নি উল্টো দিল্লী তে খাজনা পাঠানো বন্ধ করে দিলেন।সামান্য উপঢৌকন পাঠাতেন বছরে একবার । বাংলার নবাব তখন সম্পদে আর শক্তিতে এতটাই প্রবল , তিনি যে বিদ্রোহ করে বসেন নাই তাতেই মুঘল সম্রাট হাঁফ ছেড়ে বেচেছেন। নবাবের উপস্থিতিতে নবাব ছাড়া অন্য কাউকে সালাম বা কুর্নিশ করা ছিল নিষেধ । নিজের শাসনামলে অনেক মন্দির ধংস করেছিলেন। শেষ জীবনে এসে নিজের ঔধ্বত্য নিয়ে অনুশোচনায় পড়েন। ইসলাম প্রতিষ্ঠার নামে যেভাবে মন্দির ধংস্ করেছিলেন একসময়; তেমনি করে মন্দির পুন প্রতিষ্ঠা করা শুরু করেন। মৃত্যুর আগে নিজের ইচ্ছের কথা জানিয়ে যান স্ত্রীর কাছে। নিজের বানানো মসজিদের সিড়ির নিচে যেন তাকে কবর দেওয়া হয়। সাধারণ মানুষ তার কবরে পা ফেলে মসজিদে প্রবেশ করে। বিশ্বাস করতে চেয়েছিলেন এতে হয়ত তার পাপমোচন হবে। মুর্শিদাবাদের কাটরা মসজিদে ঠিক সিড়ির নিচেই নবাব এবং তার স্ত্রীর কবর এখনো আছে।
ফিরে আসি এই সময়ে । আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রীর ইগো এতই প্রবল তিনি আমেরিকা বিশ্বব্যাঙ্ক কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে মাল্টিবিলিয়ন ডলার প্রজেক্ট শুরু করেন । তার ক্ষমতা এতই প্রবল যে তার শাসনামলে বিরোধী দল সরকারী দল এক টেবিল ইফতার খায় । ৩০০ আসনের সংসদে ১৫৩ আসনে তার দলের সামনে দাড়াতেই কারো সাহস হয় না। একটু যারা উচ্চবাচ্য করে পুলিশ তাদের দরজায় তালা ঝুলিয়ে দেয় , হাসপাতালে নিয়ে চিকিত্সা করে , জেল খানা তে পুরে। তার ডাকে একসময় লগি বৈঠা নিয়ে নেমে ধ্বংসজজ্ঞ চালিয়েছিল অনুগতরা। গান পাউডার ঝলসে দিয়েছিল মানুষের আস্ত শরীর।
আমার দেশের সাবেক প্রধান মন্ত্রী। মাঠে আন্দোলন করে স্বৈরশাসক কে পরাজিত করেছেন । এখন গণতান্ত্রিক স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে লড়ছেন।মানুষ ফ্রি তে আর সেভাবে আন্দোলনে নামে না , আজকাল সবাই সুবিধা চায়। তিনি আন্দোলন থেকে পিছু হটেন না। ইগো তার ও কম নয়। তাকে ফোন দিলে তিনি জবাব দেন "কেন আগে দেন নাই ? সো হরতাল চলবে ....। " সুনাম আছে স্বৈরাচার হটাতে তিনি আপসহীন [ আদি বাংলা ভাষায় অনেকে আপসহীন -এর প্রতিশব্দ করেন "ঘাউরা " ] তার নির্দেশে সুযোগসন্ধানীদের দল পুড়িয়ে দিচ্ছে মানুষের শরীর, হাত- পা হৃত্পিণ্ড।
কিউরিয়াস মাইন্ড ওয়ান্টস টু নো ওভার এন্ড ওভার -একটুও কি তার মনে হয়না তিনি একটু বুদ্ধি খাটিয়ে আন্দোলন করলে মানুষের জীবন গুলো বেচে যেতে পারত। আন্দোলনের অহিংস পদ্ধতিগুলো কি তিনি কখনো প্রয়োগ করে দেখেছেন কাজ হয় কিনা ?
একটা ছোট্ট পরিসংখ্যান - ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশের বাজেট এর ৮৫% এর উত্স ছিল বিদেশ থেকে আনা ঋণ অথবা অনুদান [১]। যেটা ২০১০ সালে এসে হয়েছে ২% [২]। কোন সে জাদু? জাদু আমাদের ভঙ্গুর গণতন্ত্র। সামরিক শাসন না থাকাটাই জাদু। এই দুইজন প্রধানমন্ত্রী আমাদের দেশ কে পাকিস্তানের মত ব্যর্থ রাষ্ট্র হতে দেন নি। অর্থনীতির চাকা কম বেশি ধনাত্মক গতিতে ঘুরেছে। বাংলাদেশের একজন অপাঙ্ক্তেয় নাগরিক হিসাবে আমি এই দুইজনের কাছে কৃতজ্ঞ। রাজনীতির মাঠে সম্পূর্ণ জিরো নলেজ লেভেল থেকে যেভাবে তারা দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছেন, একসময় দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, এবং নানাভাবে দেশ কে এগিয়ে নিয়ে গেছেন তা নিয়ে কয়েক ডজন অভিসন্দর্ভ রচনা করা যেতে পারে। কথায় আছে "যেই যায় লঙ্কায় সেই হয় রাবন " --- দিন বদলের গান , নতুন ধারার রাজনীতি' র মত গালভরা বুলি শুনিয়ে তারা সংসদে ক্রমাগমন করেছেন এবং দিন শেষে সাধারণ মানুষের কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতির কথা ভুলে গেছেন।আজ পর্যন্ত একটা নিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক নির্বাচনের সদিচ্ছা দেখানোর মত সাহস কারো হলো না। মেয়াদ শেষে ক্ষমতা ত্যাগ করে জনগনের উপর আস্থা রাখার সাহস কারো হলো না। বরং যত দিন গেছে ততই এরা একে অন্যের প্রতি প্রতিহিংসায় কাতর হয়েছেন, তাদের উন্মাদ সমর্থকেরা টেনে হিচড়ে লম্বা করেছে লাশের মিছিল । তাদের একের পর এক গোয়ার্তুমি তে দেশের মানুষের জীবন যাত্রার বারোটা বেজেছে এবং বেজে চলেইছে।
প্রতিদিন আমাদের সবার জন্য বরাদ্দ নিঃশাস ফুরিয়ে আসছে একটু একটু করে। মৃত্যু কাউকেই তো ছাড়বে না। আমাদের প্রতাপশালী এই মানুষ গুলো নিজেদের পাপমোচনের জন্য কোনো পরিকল্পনা রেখেছেন কিনা জানতে চায় এই কৌতুহলী মন।
একটা সময় ছিল ক্ষমতার চেয়ারে বসা মানুষ গুলো বিশ্বাস করত সৃষ্টিকর্তা একসময় সব কড়ায় গন্ডায় উসুল করে নিবেন। নিজেদের পাপমোচনের জন্য উতলা হতেন। আজ সেই রামও নেই, সেই অযোধ্যা ও নেই। আমাদের এখনকার নেতাদের মনে "redemption " বা "পাপমোচন" শব্দটা কোনো দ্যোতনা তৈরী করে বলে আর মন হয়না।প্রতিদিন আমাদের সবার জন্য বরাদ্দ নিঃশাস ফুরিয়ে আসছে একটু একটু করে। মৃত্যু কাউকেই তো ছাড়বে না। আমাদের প্রতাপশালী এই মানুষ গুলো নিজেদের পাপমোচনের জন্য কোনো পরিকল্পনা রেখেছেন কিনা জানতে চায় এই কৌতুহলী মন।
তথ্যসূত্র :
উইকিপিডিয়া , বাংলাপিডিয়া , মুরুব্বিয়ানে কেরাম ,
[১] http://countrystudies.us/bangladesh/58.htm
[২] http://archive.thedailystar.net/newDesign/news-details.php?nid=131583
**http://blog.priyo.com/md-rowshon-alam/39738.html
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি-যে দেখেছি প্রতিকারহীন শক্তের অপরাধে
বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে
আমি-যে দেখিনু তরুণ বালক উন্মাদ হয়ে ছুটে
কী যন্ত্রণায় মরেছে পাথরে নিষ্ফল মাথা কুটে।
কণ্ঠ আমার রুদ্ধ আজিকে, বাঁশি সংগীতহারা,
অমাবস্যার কারা
লুপ্ত করেছে আমার ভুবন দুঃস্বপনের তলে,
তাই তো তোমায় শুধাই অশ্রুজলে--
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো।
-- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
-- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
“An eye for an eye will only make the whole world blind.” .... M.K. Gandhi
February 02, 2015
0 comments:
Post a Comment