১.
২০০৫ এ ই হবে হয়তো , রাজশাহী ওমেকায় ক্লাস নিতে গিয়েছিলাম। ক্লাসের ফাঁকে পরিচয় হল নাফিস এর সাথে। বেচারা প্রচুর কথা বলে। আমি শুনে যাই। কাহাতক একটা পোলার বকবক শোনা যায়।
অসামাজিক নই ; তবে মানুষ হিসেবে ততটা আমি মিশুকও নই। অন্তত আজই পরিচয় হয়েছে এমন কারো ক্ষেত্রে মোটেই না। একটু বিরক্ত আমি , সে বিরক্ত হয় না ;দুপুরে খাওয়াতে নিয়ে যায় আমাকে। বিকেল পদ্মা দেখাতে নিয়ে যায়। রাতে শরিফের রুমে থাকার কথা আমার। কিন্তু জোর করেই নাফিস আমায় তার বাসায় নিয়ে যায়। ছোট্ট একটা বোন নাফিস এর - সে ও দেখি ভাইয়ের মতই। আমার কাছে তার হাজার প্রশ্ন। ওর মায়ের সাথে পরিচয় হয়।কারও আচরনেই মনে হয় না যে আমার সাথে এই ফ্যামিলির মাত্র কয়েক ঘন্টার পরিচয়। খাবার টেবিলে আয়োজন দেখে আমি হতবাক। আমার বাসায়, ভাই বোন্ দের শ্বশুরবাড়ির আত্মীয় এলেই শুধু এত রান্না হয়। আমাদের পেটের ইলাস্টিক লিমিটের সর্বোচ্চ সীমায় পৌছানো নিশ্চিত হওয়া পর্যন্ত দাড়িয়ে/বসে থাকলেন আন্টি । আমার ছোট পেট। ভালবাসার চাপে মোটামুটি ত্রাহি মধুসূদন অবস্থা।
পরদিন বিকাল ঢাকায় ফিরলাম ... আমি যে আসলে কতটা অবন্ধুসুলভ তার প্রমান দিতেই এই বন্ধুর সাথে বা তার পরবারের কারো সাথেই আমার কখনও আর যোগাযোগ হয় নি।পরে শরীফের কাছ থেকে জেনেছি। নাফিস রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছিল , এলাকার ক্যাডার বাহিনীর সাথে ঘুরে বেড়ায়। পড়াশুনা মনে হয় শেষ করে নি পরে আর।
২.
বছর পাচেক আগে চারুকলার এক জনি ভাইয়ের সাথে বাসে সিট পড়েছিল পাশাপাশি। গন্তব্য কলকাতা।কথায় কথায় ভাবও জমল। শান্তিনিকেতন না কোথায় যেন ভাইয়ের সাথে দেখা করতে যাচ্ছেন। হরিদাসপুর চেকপোস্টে আমাদের দুজনেরই পাসপোর্ট জাল সন্দেহ করল ভারতীয় নিকাশঘর।কয়েকশ রুপির বিনিময়ে সেই পাসপোর্ট আসল ডিক্লেয়ার করাতে বেগ পেতে হয় নি খুব একটা। দেশের বাইরে সেই প্রথম ঘুষ দেয়া। নিজের একটা কার্ড দিয়েছিলেন জনি ভাই .... দেশে ফিরলে যেন কল দেই। কল দেয়া হয় নি কখনও।
বছর পাচেক আগে চারুকলার এক জনি ভাইয়ের সাথে বাসে সিট পড়েছিল পাশাপাশি। গন্তব্য কলকাতা।কথায় কথায় ভাবও জমল। শান্তিনিকেতন না কোথায় যেন ভাইয়ের সাথে দেখা করতে যাচ্ছেন। হরিদাসপুর চেকপোস্টে আমাদের দুজনেরই পাসপোর্ট জাল সন্দেহ করল ভারতীয় নিকাশঘর।কয়েকশ রুপির বিনিময়ে সেই পাসপোর্ট আসল ডিক্লেয়ার করাতে বেগ পেতে হয় নি খুব একটা। দেশের বাইরে সেই প্রথম ঘুষ দেয়া। নিজের একটা কার্ড দিয়েছিলেন জনি ভাই .... দেশে ফিরলে যেন কল দেই। কল দেয়া হয় নি কখনও।
৩.
জম্মু - তাওয়ি এক্সপ্রেসের দরজার পাশে বিড়ি ফুকতে গিয়ে বাংলা শুনে এগিয়ে এল এক পান্জাবি ভদ্রলোক।
জম্মু - তাওয়ি এক্সপ্রেসের দরজার পাশে বিড়ি ফুকতে গিয়ে বাংলা শুনে এগিয়ে এল এক পান্জাবি ভদ্রলোক।
..."তুমি কি চিটাগাং থাক? ?
--"না আমি ঢাকায় ... আপনি বাংলাদেশি?"
..."না। আমি থাকি চন্ডিগড়। আমার নাম বান্টি । আমি অনেক বছর ছিলাম বাংলাদেশে। তোমার কথায় চিটাগাং এর টান আছে একটু ".
---"one second! আপনাকে চিটাগাং এর মানুষ দেখাই "
পুরো ২০০০ কিলোমিটারের পথে আরো কয়েকবার cigarette-buddy হয়েছিলেন ভদ্রলোক ...
৪.
জয়সলমীরে দেখা হয়েছিল জানুব এর সাথে। ভদ্রলোক জাতে ফরাসি। ইংরেজীর জ্ঞান আমাদের মতই। বেচারার নাকি সন্ধ্যা ৬ টার পর মাথার ভিতর থেকে ইংরেজি আর আসে না। এরকম একটা অকপট স্বীকারোক্তির পর বন্ধুত্ব না হয়েই যায় না। সহজেই মিশে গেল আমাদের দলের সাথে। উটের পিঠে অথবা নিজের পায়ে চড়ে রাজস্থানের মরুভূমি আর হাভেলি ঘুরে ঘুরে দেখলাম সবাই মিলে। রাতে ইউরো ফাইনালে মুখোমুখি জার্মানি - স্পেন । ফ্রান্স ফাইনালে যেতে পারে নি। যদিও আমাদের মতন ফরাসীরা ভিনদেশ সমর্থন করার ব্যাপারটা আত্মস্থ করতে পারে নি,জানুব চায় ফাইনালে জার্মানি হারুক। স্পেনের কাছে হারল জার্মানি। কুফা লাগানোয় জানুবরে পিটাইতে মন কৈতেসিলো (লোকটা গড়নে শুকনা হলেও ওজনে আমার ২/২.৫ গুন হবে ) ।
পরদিন আমরা রেলগাড়ি চেপে যোধপুর হয়ে মুম্বাই এর রাস্তা ধরলাম। জানুব এর সাথে আর দেখা বা কথা হয়নি।
জয়সলমীরে দেখা হয়েছিল জানুব এর সাথে। ভদ্রলোক জাতে ফরাসি। ইংরেজীর জ্ঞান আমাদের মতই। বেচারার নাকি সন্ধ্যা ৬ টার পর মাথার ভিতর থেকে ইংরেজি আর আসে না। এরকম একটা অকপট স্বীকারোক্তির পর বন্ধুত্ব না হয়েই যায় না। সহজেই মিশে গেল আমাদের দলের সাথে। উটের পিঠে অথবা নিজের পায়ে চড়ে রাজস্থানের মরুভূমি আর হাভেলি ঘুরে ঘুরে দেখলাম সবাই মিলে। রাতে ইউরো ফাইনালে মুখোমুখি জার্মানি - স্পেন । ফ্রান্স ফাইনালে যেতে পারে নি। যদিও আমাদের মতন ফরাসীরা ভিনদেশ সমর্থন করার ব্যাপারটা আত্মস্থ করতে পারে নি,জানুব চায় ফাইনালে জার্মানি হারুক। স্পেনের কাছে হারল জার্মানি। কুফা লাগানোয় জানুবরে পিটাইতে মন কৈতেসিলো (লোকটা গড়নে শুকনা হলেও ওজনে আমার ২/২.৫ গুন হবে ) ।
পরদিন আমরা রেলগাড়ি চেপে যোধপুর হয়ে মুম্বাই এর রাস্তা ধরলাম। জানুব এর সাথে আর দেখা বা কথা হয়নি।
৫.
মুম্বাই থেকে গোয়ার ট্রেনে সমবয়সী একটা ছেলের সাথে দেখা হয়েছিল। আনন্দ নায়ার, কর্নাটকে বাড়ি। আর সব ভারতীয়দের মত সে আমাদের সাথে হিন্দি বলছে না ইংরেজী বলছে। ফেইসবুক বন্ধু আমরা এখনো। ট্রেন থেকে নামার পর আজ পর্যন্ত একটা কথা ও হয়নি।
মুম্বাই থেকে গোয়ার ট্রেনে সমবয়সী একটা ছেলের সাথে দেখা হয়েছিল। আনন্দ নায়ার, কর্নাটকে বাড়ি। আর সব ভারতীয়দের মত সে আমাদের সাথে হিন্দি বলছে না ইংরেজী বলছে। ফেইসবুক বন্ধু আমরা এখনো। ট্রেন থেকে নামার পর আজ পর্যন্ত একটা কথা ও হয়নি।
৬.
বাসে করে রাস্টন থেকে আর্লিংটন যাবার পথে শ্রেভপোর্টে যাত্রা বিরতি। বেশ বড় একটা গ্যাস স্টেশন পাশেই। পায়চারী করতে করতে ঢুকে যাই। আমাকে দেখে হয়তো মেক্সিকান ভেবেই গ্যাসস্টেশনের মালিক হেঁকে উঠেন "কমো এসটা মিগো" । ভুল ভাঙ্গিয়ে বলি আমি বাংলাদেশি।তিনি সাথে সাথেই শোরগোল করে ওঠেন। আর দশটা পাকিস্তানির মতই উর্দু জানি কিনা তার তোয়াক্কা না করেই সেই ভাষায় আলাপ জমানোর চেষ্টা করেন। বাংলাদেশি-পাকিস্তানি ভাই ভাই - টাইপ বুলি আওড়াতে থাকেন। দরজার ওপাশ থেকে এরপর একে একে তার মা বোন ফুপু দাদি সবাই একে একে আসতে থাকেন আমাকে দেখতে। ওই এক দরজার পিছনে এত বিশাল পরিবার বসবাস করে তাই দেখে আমি একটু হত চকিত। সবাই উর্দুতে এটা সেটা জিজ্ঞেস করে। আমি ইংরেজিতে জবাব দেই। তাদের কথায় উর্দুর পরিমান একটু একটু করে কমে আসছে। এমন সময় ভিতর থেকে খালা ফুপু টাইপ কেউ একজন এসে শুদ্ধ বাংলায় বললেন "তুমি বাংলাদেশ থেকে এসেছ?" এবার আমার নতুন করে অবাক হবার পালা। এক কথা দু'কথায় জানলাম ভদ্রমহিলা বাংলাদেশি নন; মুর্শিদাবাদের।এই পরিবারের সাথে একাধিকবার দেখা হয়েছে - যতবার রাস্টন থেকে বাস এ চড়ে আর্লিংটন গিয়েছি ততবার । একজনের ও নাম বলতে পারব না। ওই একটা দেশের মানুষ ভালো ব্যবহার করলে আমি অস্বস্তি তে পড়ে যাই ।
বন্ধু দিবস :অগাস্ট ৩, ২০১৪
ওহাইও ,
বাসে করে রাস্টন থেকে আর্লিংটন যাবার পথে শ্রেভপোর্টে যাত্রা বিরতি। বেশ বড় একটা গ্যাস স্টেশন পাশেই। পায়চারী করতে করতে ঢুকে যাই। আমাকে দেখে হয়তো মেক্সিকান ভেবেই গ্যাসস্টেশনের মালিক হেঁকে উঠেন "কমো এসটা মিগো" । ভুল ভাঙ্গিয়ে বলি আমি বাংলাদেশি।তিনি সাথে সাথেই শোরগোল করে ওঠেন। আর দশটা পাকিস্তানির মতই উর্দু জানি কিনা তার তোয়াক্কা না করেই সেই ভাষায় আলাপ জমানোর চেষ্টা করেন। বাংলাদেশি-পাকিস্তানি ভাই ভাই - টাইপ বুলি আওড়াতে থাকেন। দরজার ওপাশ থেকে এরপর একে একে তার মা বোন ফুপু দাদি সবাই একে একে আসতে থাকেন আমাকে দেখতে। ওই এক দরজার পিছনে এত বিশাল পরিবার বসবাস করে তাই দেখে আমি একটু হত চকিত। সবাই উর্দুতে এটা সেটা জিজ্ঞেস করে। আমি ইংরেজিতে জবাব দেই। তাদের কথায় উর্দুর পরিমান একটু একটু করে কমে আসছে। এমন সময় ভিতর থেকে খালা ফুপু টাইপ কেউ একজন এসে শুদ্ধ বাংলায় বললেন "তুমি বাংলাদেশ থেকে এসেছ?" এবার আমার নতুন করে অবাক হবার পালা। এক কথা দু'কথায় জানলাম ভদ্রমহিলা বাংলাদেশি নন; মুর্শিদাবাদের।এই পরিবারের সাথে একাধিকবার দেখা হয়েছে - যতবার রাস্টন থেকে বাস এ চড়ে আর্লিংটন গিয়েছি ততবার । একজনের ও নাম বলতে পারব না। ওই একটা দেশের মানুষ ভালো ব্যবহার করলে আমি অস্বস্তি তে পড়ে যাই ।
বন্ধু দিবস :অগাস্ট ৩, ২০১৪
ওহাইও ,
August 03, 2014
এই রকম একটা প্রয়োজনীয় পোস্ট দেয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। অনেক ভাল লাগল। সময় থাকলে আমার online department store সাইটে একটু ঘুরে আসিয়েন।
ReplyDelete