Tuesday, November 4, 2014

বুঝলো না কেউ তো বুঝলো না

Posted by with No comments

আমাকে আজকাল সবাই ভুল বুঝিতেছে । বলিতেছি এক বুঝিতেছে আরেক। সত্য বলিলে মনে করিতেছে ইতরামি করিতেছি  , আর ইতরামি করিলে মনে করিতেছে সত্য ।  সেই ছোট বেলায় হাপপেন আমলে খেলার মাঠে পোলাপান আমার কথা এক বাক্যে মানিয়া লইত। কারন কাইন্ঠামি -চুরামি- বাটপারি আমি জীবনেও করি নাই।  খেলার মাঠে আল-আমিন তথা বিশ্বস্ত হিসাবে বিশেষ সুনামের অধিকারী ছিলাম ।

বড় হইতে থাকিলাম, হাপপেন পরা ছাড়িয়া ফুলপেন পরা শুরু করিলাম। কিন্তু হায় কবিগুরু যেমন বলিয়া ছিলেন "আমার সুনাম যে যায় সাঝ বেলা তে  " তেমনই করিয়া আমার বিশ্বস্ততার  সুনাম হুমকির মুখে পড়িতে থাকিলো।  আমার কথা মানুষ অবিশ্বাস করিতে শুরু করিল  একসময়। একটা কাহিনী বলি - আমি তখন সবে মাত্র মাত্র  ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করিয়াছি । চাকরি বাকরি খুজি না। জিয়ারি পড়ি। যন্ত্রকুশলীদের দেশে চাকরির বাজার ভালো নহে। তাই সবাই জিয়ারি পড়িবে ইহা  এমন কিছু  ব্যাপার নহে - "বিসিএস এর প্রেপ নেই তাই চাকরি খুজি না " এই কহিয়া  ভাব লইতাম। এবং এই ভাব লোকে চাটিয়া পুটিয়া খাইত  - সর্বান্তকরণে মিথ্যা হইলেও লোকে বিশ্বাস করিত । এম কে রলিং বলিয়াছিলেন - "বিশ্বাস ডাজ নট  ম্যাটার চপিং উড"। আমার পা--ট  বজায় থাকা দিয়া ই কথা।  তা মূল প্রসঙ্গে ফেরত আসি। এক বড় ভাই থাকিতেন শহীদ স্মৃতি হলে।  আমি তখন সেই বড় ভাই এর পাশের রুমে দুই বন্ধু নিয়া কোলাহল করিয়া দিনাতিপাত করিতেছি।  দুপুর দ্বি প্রহরে  ১১০ টাকায় বোল ভর্তি নান্নার বিরানি খরিদ করিয়া তিন বন্ধু সমান ভাগে করিয়া  খাই। 

বড়ভাইয়ের মাথায় ঢুকে না 
    - বেকার পোলাপান এত আনন্দে থাকে কেমনে? 

আমি কই 
    - চাকরি খুঁজে যেই লোক চাকরি পায় না তারে বেকার বলে - আমি চাকরি খুজিনা। আমারে বেকার বলবেন না।   

ভাইজান দিলখোলা সহজ সরল মানুষ। আমার সঙ্গে বেশ মধুর সম্পর্ক।মাঝে  মাঝে ইষৎ মস্করা  করিয়া বলেন 
    - এত ফিটফাট হইয়া কই যাও? গার্লফ্রেন্ড এর সাথে দেখা করতে  ? 

আমি সুধাই 
    -ভাই - হ - ক্যামনে বুঝলেন? তয় আমারটার সাথে তো ডেইলি দেখা হয় আজকে বিলকিস আপার (উনার গার্লফ্রেন্ড) সাথে দেখা করতে যাই।

ভাইজান কিন্তু বেজায় খূউল।  মাইন্ড খায় না। আমাকে পাল্টা জবাব দেন 
    - দেইখ আমার শশুর কিন্তু বেজায় কড়া।

    - কন কী ? আপনে শশুর সমেত ডেটিং এ যান  ? ... 

ওহহ...  আবার মূল প্রসঙ্গ ছাড়িয়া দিল্লি  গমন করিয়াছি বোধ হইতেছে । পয়েন্ট এ ফেরত  আসি। একদিন ভাইকে শুধাইলাম 
    - ভাই বিসিএসের তো রেসাল্ট  দিসে। কলাভবনে। আপনার তো ফোন নম্বর রোল নম্বর কোনটাই জানি না। তাই দেখতে পারি নাই। আমার হয় নাই। আপনের টা  দেইখা আসেন। 

ভাইজান "আগে কইবা  না? " কহিতে কহিতে লুঙ্গি ছাড়িয়া প্যান্টের উপর চাপিলেন এবং কলাভবন গমন করিলেন। এহেন প্রকারের ডাহা মিত্থ্যা কথা একটা মানুষ কিভাবে বিশ্বাস করিতে  পারে  তাহা ভাবিয়া  ..থুক্কু ..দেখিয়া  .. আমি পুরাই মাননীয় স্পিকারে পরিনত হইলাম। এবং আসন্ন কৌতুক উপভোগ করিবার  উত্তেজনায় উনাকে বিরত রাখার চিন্তা মস্তিস্ক হইতে অপসারিত করিলাম। আমার বোধ হইতেছিল পিএসসির পরিবর্তে কলাভবনে বিসিএস এর রেসাল্ট   প্রদানের ফাকি উনি ধরিতে পারিবেন।  

ভাইজান কলাভবন হইতে ফিরিয়া আসিয়া কহিলেন 
    - আমার সাথে মজা নিলা না ? তোমার কথা আর যদি কোনদিন আমি বিশ্বাস করসি। 

আমি হস্তকর্ণ প্রণিপাত পূর্বক সুধাইলাম  
    - ভাই আর জিবুনে আপনার সাথে ফাইজলামি করব না। 

সপ্তাদুই অন্তর  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এম বি এ ভর্তি পরীক্ষার রেসাল্ট দিল। আমি সুধাইলাম 
    - ভাই এম বি এ র  তো রেসাল্ট   দিসে। কলাভবনে। আপনার তো ফোন নম্বর রোল নম্বর কোনটাই জানি না। তাই দেখতে পারি নাই। আমার হইসে । আপনের টা  দেইখা আসেন।

উনি কহিলেন 
    - তোমারে আমি বিশ্বাস করি না।  

সুধাইলাম 
    - ভাই এই আকাশ -বাতাস এই সবার কসম লাগে।আপনার বিলকিস বানুর কসম লাগে।  আজকে সত্যি কৈসি। 

উনি মানিলেন না। খাটের  একটা নিচ ছিল .. সেই  নিচে এক টিন ছিল .. টিনের ভিতর মুড়ি ছিল। 
উনি নিশ্চিন্তে মুড়ি চাবাইতে চাবাইতে সম্মুখে টিভিতে চলমান ঝি ঝি পোকা খেলার  দিকে মনোযোগ প্রদান করিলেন।বেশ হালকা মেজাজে জিজ্ঞাসিলেন 
    -"তুমি কার সাপোর্টার ? "

পরে বোধ করি বন্ধুদের নিকট অবগত হইয়া রেসাল্ট  হেরিতে কলাভবন গমন করিয়া ছিলেন । 

এর পরে খবর আর মনে পড়িতেছে না । কিন্তু সেই হইতে  খেয়াল  করিলাম আমি  মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা হারাইতেছি । ২ বলিলে  মানুষ ৩ ভাবে তিন  বলিলে  ভাবে দুই। অর্থাত সত্য বলিলে ভাবে "মজা লস ?" আর মিথ্যা বলিলে  "তারপর ?". 

কিছুকাল পূর্বে জনৈক  অশিষ্ট জন গুপ্ত কোনো এক বঙ্গীয় সাহিত্য সভায় নিজের দুকলম লেখা প্রকাশ করিলে সমালোচকগণ হুমড়ি খাইয়া পড়িলেন।  উত্তেজনার বাড়াবাড়ির এক পর্যায়ে জনৈকা রম্যরচয়িনীর সহিত বাকবিতন্ডা জমিয়া উঠিলে উত্তেজনা সামলাইতে না পারিয়া অভব্য ভাষার প্রয়োগ আরম্ভও  করিলেন । আর সকলের সহিত একত্র হইয়া আমিও তাহাকে ব্যাপক পচানি প্রদান পূর্বক দুকথা শুনাইয়া দিলাম। কাউকে পচানি দিবার জন্য ততসম  শব্দ আমার যাহার পর নাই প্রিয়। যথারীতি  উনি বুঝিতেই পারিলেন না কেহ উনাকে পচানি দিয়াছে । আমার চটুল এবং অশালীন ভাষার সুসভ্য প্রয়োগে বিমোহিত হইয়া  আমাকে ধন্যবাদ প্রদান পূর্বক আমার সেই গুপ্ত সভার পচানি ফেইসবুক এ নিজের দেয়াল এ  বুক ভরা গর্ব সমেত ''মম চিত্তে গীতি নিত্যে  ' করিয়া দিলেন।

 বন্ধুদিগেরে বলিতে লাগিলেন 'দেখুন কি সুন্দর আমার গুনগান করিয়াছে '। 

 উনার এক বন্ধুপ্রতিম আসিয়া উনাকে কহিল 
    - " দোস্ত তুমি যে পচানি খাইয়াছ আসলেই বুঝো নাই ? .... ইন্হী লোগো নে চুরায়া লাল দুপাট্টা তেরা ".

উনি বলিলেন 

    - আরে রাখো তোমার দুপাট্টা -  "এক জীবনে এত পেম  পাবু  কুথায়  ?"


সেদিনের সেই শারদ  প্রভাতে আমি তব্দা খাইয়া প্রাতরাশ সম্পন্ন করিয়াছিলাম।


milford ১১.০৪.২০১৪

---------

লোকে যে আমাকে ভুল বুঝে এই নিয়া এতদিন খুবই দুশ্চিন্তায় ভুগিতাম; বিলিতি ভাষায়  লোকে  যাহাকে বলে Inferiority Complex. --- খোদা আমি এমুন ক্যান?  ... আমার দুর্দশায় ঈশ্বরের চোখ আর্দ্র হইয়া উঠিত কিনা আমার জানিবার সৌভাগ্য হয় নাই।

তবে পাশার দান উল্টিয়া গিয়াছে আজকাল। নিজেকে বস মনে হইতেছে। অনেক বড় বড় লোকের কথাও লোকে ভুল বুঝিতেছে। একটি দেশের সবচে প্রতাপশালী দুই রমনীর কথা বলিতেছি। ধরা যাক উনাদের নাম  গোলাপী এবং গোপালি । সত্যযুগে তাদের মাঝে বেজায় সখ্যতা ছিল। এখন অবশ্য ঘর কলিকাল ,পরস্পরের  ছায়া ও মাড়ান না উহারা ।

গোলাপী আর গোপালির কোটি কোটি ভক্ত। আজকাল ভক্তরাও তাহাদের কথা ভুল বুঝিতেছে। গোলাপী বলিলেন "দেশে গোপালি স্বৈরাচার কায়েম করিয়াছে। কিলিয়া হাকিয়া ডাকাত মারিয়া দেশে শান্তি আনয়ন কর ।   " ভক্ত কুল ভুল বুঝিয়া পেট্রল বোমা নিয়া বাসে মারিতেছে। গোলাপী বলিয়াছে ডাকাত মারিতে কিন্তু ভক্ত মারিয়া ফেলিয়াছে শিশু। একটা মারিয়া তারপর আসিয়া জিজ্ঞাসা করিতেছে "তারপর ?" গোলাপী কহে "যাহা চলিতেছে চলিবে। ..চলিতেই থাকিবে ..."  গোলাপীর এক কালে যখন আরো বেশি ক্ষমতা ছিল তখন ফেলু মাতব্বরের কপাল খুলিয়া ছিল। ফেলু ভাবে এইভাবে যদি গোলাপিকে আরেকবার সেই ক্ষমতা দেওয়া যায় তাহার লাভ ই হইবে।  খেপা ভক্তকে কিছু টাকা দিয়া আরো মানুষ মারিতে উত্সাহ দেয় সে। ভক্ত পরের দিন গিয়া কাহাকে  মারিবে ঠিক করিতে না পারিয়া আবার যেদিকে চোখ পরে বোমা মারে। ...... এইবার ফুল ফ্যামিলি পুড়াইয়া দিতে সক্ষম হয় সে .... আনন্দ পায় সে... ..মানুষ মারিয়া মজা তো। ... আজ সন্ধ্যায় আসন্ন গাঁজার আসরে বেশ টানিতে পারিবে ভাবিয়া এক্ষণে ঘোর লাগিয়া যাইতেছে তাহার  !!!

বছর আষ্টেক আগে এইভাবে গোপালি "মাঝি  বাইয়া যাও রে  " বলিয়া ডাক দিয়াছিলেন। ভক্তকুল লগি বৈঠা নিয়া নামিয়া ছিল। গানপাউডার দিয়া মানুষ মারা যায় গোপালির মুরিদান তাহা "এস নিজে করি " করিয়া দেখাইয়াছিল। মানুষ মারিয়া একা গোলাপির  মুরিদান মজা নিতেছে দেখিয়া গোপালির মুরিদানের  খুব রাগ হয়। তারাও ঝাপাইয়া পরে।  তারাও পেট্রল বোমা মারা শুরু করে।  কখনো মানুষ মারে কখনো নিজেরাও মরে।  পেট্রল বোমায় মারিয়াও মজা মরিয়াও মজা।

কোটি কোটি মুরিদানের মালিক  গোলাপী আর গোপালির কথা যদি লোকে ভুল বুঝিয়া থাকে তাহা হইলে  আমি নিশ্চই গোপালি অথবা গোলাপির মতন বিশাল ক্ষমতার মালিক হইবার পথেই আছি। যেই বয়সে উহারা এত ক্ষমতার মালিক হইয়াছিলেন আমিও মোটামুটি সেই বয়সের দিকেই চলিতেছি। নিজেকে নিয়া তাই পা-টের  উপর আছি।  পুরাই বস।তবে মাঝে মধ্যে এই আশংকা ও হয় এত এত বোকাসুদা খ্যাপা  মুরিদান নিয়া আসলে আমি করিব  টা কি ?


------


Milford 2.9.2015








0 comments:

Post a Comment