1. মে ২, ২০১৪
একটু একটু বুদ্ধি-শুদ্ধি হবার পর থেকে চারপাশে সিস্টেমের জঞ্জাল আমাদের চোখের সামনে পড়তে থাকে।তার অনেক স্বপ্ন ছিল , সেই স্বপ্নের নায়ক সে নিজে ছিল কিনা এই প্রশ্ন ওকে কখনো করা হয়নি। ওর স্বপ্নে ছিল - "দেশে একটা বড় বিপ্লব আসন্ন। এই দেখ আর ২০-৫০ বছরের মধ্যে দেশে একটা বিপ্লব আসবে। মানুষে মানুষে শ্রমের বৈষম্য সম্পদের বৈষম্য আর থাকবে না। সব কিছু ভেঙ্গে নতুন করে তৈরী হবে।"
- আমি ওর এই দিবা স্বপ্ন দেখে মজা পাই ; তর্ক জুড়ে দেই - "বিপ্লব রাশিয়া , নর্থ কোরিয়া তে কি এমন টুট ফালাইসে ? বুঝা আমারে। "
সে তার মত তর্ক করে যেত , ও তর্ক করত যুক্তি দিয়ে তথ্য দিয়ে যখন হাতে কিছু পেত না তখন আবার পুরানো তথ্য পুরানো যুক্তি ফিরে ফিরে আসত । আমি তর্ক করতাম বেচারাকে পেইন দিয়ে , বা ক্ষেপিয়ে - মজা পেতাম - তাই।আশেপাশে কেউ থাকলে আমার পক্ষেই জুটে যেত, লোকবল বেড়ে যেত আমার ।
-এইযে দেখ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা কিন্তু স্তালিনের ফর্মুলা। স্তালিন সোভিযেত ইউনীয়নের চেহারা পাল্টে দিয়েছিল পঞ্চ বার্ষিকী পরিকল্পনার জোরে।
- আমাদের দেশে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা তো বেকার। এরশাদ সরকার নাকি সামুয়েলসন কে নিয়ে এসেছিল পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা করে দিতে। কি লাভ হইসে? এরশাদ সরকারের শেষ সময়েও দেশের বাজেট এর ৮০ শতাংশ বরাদ্দ থাকত বিদেশীদের সাহায্য থেকে।
[টিকা : সামুয়েলসন নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ৯১ বছর বয়সে ২৩ বছর বয়সী স্ত্রী রেখে কদিন আগে পটল ক্ষেতে বেড়াতে গেছেন।]
চায়ের কাপে চা ফুরোয়। আরেকটা সোনালী পাতা ধরে ও । একটা বেনসনও মনে হয়ত উঠে আসে আমার হাতে। কথার মোড় ঘুরে একসময়। দুজনেই জানি এই তর্কের কোনো শেষ নেই। আমরা আবার ফিরে যাই পুরানো আজাইরা প্যাচালে । "তর কাউয়ার খবর বল। কইসস ওরে? তোর হইয়া আমি কমু?"
সেই বেচারা প্রেমে পড়েছিল। তার সাংকেতিক নাম ছিল 'কাউয়া ' কাউয়া কে কাউয়া বললে খেপে যেত, বলতো - "তর চে দেখতে ভালো আসে টুট টুট টুট। .... (অপ্রকাশযোগ্য )"......
সে তার ভালো লাগার কথা জানায় নি 'কাউয়া ' কে। নিজের সাহস ছিল না তত। মধ্যবিত্ত পরিবারের বড় ছেলে সে। হাত খরচার টাকা বাবার হাত থেকে নিতেই নিজে যে কত বড় অথর্ব সেটা ভেবে লজ্জা লাগে তার । প্রেম ট্রেম করতে তো টাকা পয়সা একটু হইলেও লাগে।ঐসব নিয়া ভাবার সময় এখন নাই।
তার দিন চলে যায়। ভালো টুইশন পড়িয়ে হাতে কিছু টাকা পয়সা আসে একসময় । আত্ম বিশ্বাস বাড়ে। বাড়ে সাহস।রাজনীতিতেও নাম লেখায় দিনবদলের সপ্ন নিয়ে। ছোট একটা রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের বড় নেতা হয় সে একসময়। কাউয়ার কথা ভুলে যায়। অন্য একটা মেয়ের সাথে বেশ বন্ধুত্ব হয় তার দুজনেই এক ই সংগঠন এর কর্মী ।
তার দিবা স্বপ্ন উড়তে থাকে আকাশে , মেয়েটাও ভালই সাপোর্ট দেয় স্বপ্ন দেখায় । একদিন পাস করে বের হয়। সিস্টেমএর ভেজাল নিয়ে উদ্বিগ্ন দুই তরুনের একজন সেই জঞ্জাল পাশ কাটিয়ে পাড়ি দিয়েছি পুজিবাদের পরাকাষ্ঠা অমেরিকায় ।সে কিন্তু সেই সিস্টেমের কাছে নিজেকে সপে দেয় নিতান্তই অনিচ্ছায় । চাকরি শুরু করে। বিদেশী পুজিবাদী প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশ শাখায় । শুরুতে বেতন সামান্য হলেও ভবিষ্যত সম্ভাবনাময়।
বান্ধবীর নতুন বন্ধু জোটে। বান্ধবী জাতটার প্রতি নির্মহতায় আক্রান্ত হয় সে। দিন বদলের স্বপ্ন দেখার দিন ফুরোয় তার। দিন শেষে খেয়ে পরে বেচে থাকাটাই যখন প্রথম ও প্রধান চ্যালেঞ্জ তখন গুষ্টি কিলাই তোর দিন বদলের। এই ঘুনে ধরা দুর্নীতিপ্রবণ সমাজে সাম্যবাদের ধারনা কতটা অসার বুঝতে পারে সে । রাজনীতির অন্তপুরের অন্তঃসার শুন্য ফাপা প্রকোষ্ঠের চেহারাটা দেখে ফেলেছে সে এত দিনে । সেখান থেকেও নিজেকে সরিয়ে নেয় সযত্নে।
নতুনকরে আবার শুরু করতে চায় সে , সমাজ বদলে দেবার স্বপ্নটা না হয় হার মানল; অন্তত নিজের চারপাশে নিজের স্বপ্নের মতন সেই পৃথিবীটা তো তৈরী করে নেয়াই যায়। চেষ্টা করেই দেখা যাক না। ........এই যুদ্ধটাও অসমাপ্ত থেকে যায়। একদিন পরোপুরি ঘুম ভাঙ্গে 'তার।
হঠাত্ করেই উপলব্ধি করতে পায় সব গুলো যুদ্ধক্ষেত্র থেকে হারিয়ে গিয়েছে সে। একটা নতুন যুদ্ধক্ষেত্রের সন্ধানে যাত্রা শুরু করে সে।
..... অনেক গুলো দিন কেটে যায়। ওকে ফেইসবুকে নক করি প্রায় ই -
- কিরে কি অবস্থা?
- এইত চলে যায় তোর কি খবর ? ...
কথা এগোয় ..সে তার লাইফ প্লান এর কথা বলে ..
সে : টাকা পয়সা কামাবো , দেশে ঘুরাঘুরি করতেসি। নেক্সট ইয়ার কামাই বাড়বে। দেশের বাইরেও ঘুরতে যেতে পারব। প্রতি বছর দুইটা কইরা দেশ ঘুরতে যাব। এইটাই প্লান।
আমি :একটা বিয়া কর । লাইফ এ কিছু বাদ রাখা যাবে না। দিন শেষে বাসায় ফিরে ফ্রি তে একটু মজার চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কইরা ফালা।
সে : এইটা করা সম্ভব না রে। যদি কোনদিন সত্যি সত্যি ট্রু লাভ আসে জীবনে। ... যেটা পুরানো স্মৃতি তাকে ম্লান করে দিতে পারবে। ..এরকম কিছু যদি কখনো হয়। ..তখন দেখা যাবে। কোনো মেয়ের সাথে চিটিং করা আমার দ্বারা হবে না।
আমি : There is nothing that is called true love. ছিলি তো অনেক দিন true love এর সাগরে মইজা। বালডা ফালাইসো আমার।
সে : তা হইতে পারে। হয়ত আমি যেই প্রজেকশন করি তাতে কোনো প্রবলেম আছে।
আমি : Regardless how you define true love, it does not exist in a real world. So be it ...eat , shit , bang ...let your offspring see the light of the world ... let your part be served to evolution.
সে : হাহাহাহাহ ভালই কইসস। ... তুই করস না ক্যান ? দেশে আইবি কবে ? ....
*******
সেই কথোপকথন এর এক বছর পর দেশে গিয়েছি গত বছরের শেষে। আগের মতই আছে সে । শুধু দিনবদলের স্বপ্ন দেখা মানুষটা নাই। বিপণন প্রকৌশলী হিসাবে বেশ সুনাম কামিয়েছে। বেতন বেড়েছে জীবনযাত্রায় এসেছে পরিবর্তন। আগের মতই ঘরবিবাগী; কিন্তু বাস্তবতা মেনে নেওয়া পাতি বুর্জোয়া শ্রেনীর সাথে মিশে গিয়েছে আর সবারই মত।
Take a look around you
The war is gone
And you're the one now
Take a look around you
The game is won but you're alone now
2. মে ২৯, ২০১৪
বাঙালি বিদেশ বিমুখ; তা তো আর আজকে থেকে নয় ; শতাব্দী প্রাচীন কাল সময় থেকে। একটা সময় ছিল - ' সমুদ্রযাত্রা খারাপ ' এই রকম কুসংস্কার প্রচলিত ছিল এই অঞ্চলে। সেই সংস্কার ভাঙ্তে চেয়েছিলেন রাজা রামমোহন রায়। খুব একটা কাজ আসলে হয়নি। দেশের বিশাল একটা অংশ এখনো "এই দেশ ছেড়ে আমি কোথাও যাব না " এই রকম দর্শন অন্তরে লালন করে । কারনটা দেশের প্রতি টান নয় ; কারন হচ্ছে - নতুন দেশ, নতুন কিছু'র প্রতি বাঙালির চিরকালের ভীতি বা জড়তা। দেশপ্রেম এখানে অজুহাত মাত্র। [ব্যক্তিগত মতামত]
প্রবাসী বাঙালিদের ঢালাওভাবে কে স্বার্থপর বলে জেনারেলাইজ করা দেশপ্রেম ফলানো লোক হাটে-ঘাটে-মাঠে সবখানে পাওয়া যায় , ব্লগে পাওয়া যায় সবচে বেশি । এই ছোটলোকি ফিলোসফি নিয়ে বাসায় বসে আঙ্গুল চুষতে চুষতে শতাব্দীর পর শতাব্দী পার হয়ে গেছে । আরবরা আফ্রিকা ইউরোপ দখল করে এদিকে ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত চলে গেল। ব্রিটিশরা পৃথিবীর অর্ধেক মাটির অধিকার নিয়ে সগৌরবে দাড়িয়ে আছে । মঙ্গল-তুর্কি রা চীন সাগর থেকে নিয়ে ভুমধ্য সাগর পর্যন্ত দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।
আর সংখায় কয়েকগুন বেশি "ভদ্র অতি পোষমানা এ প্রাণ, বোতাম আঁটা জামার নীচে শান্তিতে শয়ান" বাঙালি ঘরের কোনে বসে পরচর্চা করতে করতে , টিভি তে খবর দেখতে দেখতে , জ্যাম সাঁতরিয়ে অফিস গিয়ে আর বেকার সময়ে চা বিড়ি খেয়ে ..খালেদা হাসিনাকে শাপ-শাপান্ত করে ..... দিনের শেষে - "দেখা হলেই মিষ্ট অতি ... মুখের ভাব শিষ্ট অতি ... অলস দেহ ক্লিষ্ট গতি .... গৃহের প্রতি টান" ।
আর যারা জীবন বাজি রেখে ... জিব্রাল্টার পাড়ি দিতে গিয়ে সাগরে ডুবে মরে .... সাহারা মরুভূমিতে তৃষ্ণায় মরে .. আমিরাতে উটের পিঠে মরে ...আফগানিস্তান ইরাকে গুলি খেয়ে বেঘোরে মারা পড়ে.... মালয়েশিয়ায় ক্ষুধায় আর নিষ্ঠুর পিটুনিতে মরে তাদের খবর কেই বা রাখে - তারা ছোটলোক "অবৈধ" বাংলাদেশী .... আর যারা মরে নাই সেই ৬ মিলিয়ন বাংগালি যারা "বিদেশে সুখে থাকে .... দেশের খোজ রাখে না ....Drained Brain..." ... তাদের দেশপ্রেম ডিসকোয়ালিফাইড
পৃথিবীর ইতিহাস বলে ঘরকুনো জাতি দিনে দিনে বিলুপ্ত হয়েছে ..... নূহের জাহাজে যারা যেতে চায় নি ...... মায়ান -আজটেক সভ্যতা ... নিজ ভূমি আকড়ে থাকতে থাকতেই বিলুপ্ত হয়েছে .... বর্বর যাযাবর মঙ্গলদের হাতেই পত্তন হয়েছিল পৃথিবীর বৃহত্তম সাম্রাজ্যের ....... যেদিন থেকে ইউরোপ জাহাজে চেপে সমুদ্র পাড়ি দিল সেদিন থেকে ওরা পৃথিবীর কর্তৃত্ব নিজের মুঠোয় শুরু করেছিলো ...... অভিবাসীদের হাতে গড়া আমেরিকা আজকের পৃথিবীতে সুপার পাওয়ার .......
বাঙালি নিজেই ভুলে যায় .....তাদের সেরা দার্শনিক "বরশা হাতে ভরসা প্রাণে সদাই নিরুদ্দেশ " হতে চেয়েছিল ........ কারণ গৌরব সেখানেই .....
৩.
ফেইসবুকে একজনের পোস্ট এ কমেন্ট করেছিলাম। লেখাটা সাকিব রিলেটেড। লেখক বলছিলেন দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীরা যে বিদেশে চাকরি করতে যায় সেজন্য তাদের দেশপ্রেম নিয়ে কি কেউ প্রশ্ন তোলে ? তবে সাকিব্ বিদেশে লীগ খেলতে গেলে তার বিরুদ্ধে কেন দেশপ্রেমের অভাবের অভিযোগ আনা হয়?
যেসব শিক্ষার্থীরা বিদেশে পড়তে সেখানেই চাকরি বাকরি করছেন বা থেকে যাচ্ছেন তাদের কে বেশ ঢালাও ভাবেই Drained Brain হিসাবে tag করা হয় । তাদের প্রতি দেশের বুদ্ধিজীবিগন একধরনের অদেশপ্রেমিক ট্যাগ দেবার প্রবণতা অনুভব করেন।
এক বন্ধু আমাকে জানালেন তিনি আমার সঙ্গে পুরোপুরি একমত নন। জামাই হিসাবে বুএট পড়ুয়া বিদেশী ছেলের ব্যাপক কদর থেকে বোঝা যায় - সমাজে তাদের বিশেষ গ্রহণযোগ্যতা আছে।
আমি তার কথা পুরোটা অস্বীকার করতে পারি না। তার সঙ্গে বেশি ভারী তর্কে যাই না। আসলেই তো। কথা তো কিছু মাত্র মিথ্যে নয়। যদিও নিজের কথা গুলোও তাতে ফিরিয়ে নিতে পারি না। এই তো কিছুদিন আগেও প্রশ্ন ফাস নিয়ে জুড়ে যাওয়া ক্যাচালে ব্লগে এবং ফোরামে বাচ্চা পোলাপান ছাত্ররা বুএট এর ছেলেদের বিদেশে গিয়ে দেশে না ফেরাকে নিয়ে কি পরিমান গালাগালিটাই না করলো। কেউ কেউ আবার বলে 'অনেকেই দেশে থাকে।দেশের সেবা করে। সবাই ওরকম না।' এমন ভাব যেন 'ওরকম' হওয়া টা অপরাধের কিছু।
জাফর ইকবাল পড়াশুনা , গবেষণা শেষে যখন দেশে ফেরেন তার এই ফিরে আসাটা বেশ মহার্ঘ্য ভাবে দেখেন দেশের আপামর শিক্ষিত সাধারণ। তাকে নিয়ে তর্কের আসরে এই প্রসঙ্গ উঠে আসে বারবার। কি মহান তিনি!!! তাহলে কি যিনি পড়াশুনা শেষে দেশে ফেরেন নি তিনি ততটা মহান নন ?
নিজে অনেকটা এই দ্বিতীয় গোত্রে পড়ি বলেই কিনা, মেনে নিতে পারি না আমার দেশের মানুষের দ্বিমুখী এই আচরণ। এই সমাজের কিছু মানুষ নিজের মেয়ে বিয়ে দেয়ার সময় বিদেশী পাত্র পেলে ধন্য হন আবার সেই সমাজেরই কিছু মানুষ বিদেশে থেকে যাওয়াকে দেশের প্রতি মমত্ব হীনতা হিসেবে গন্য করেন। সবচে আশ্চর্য হই কখনো কখনো একই মানুষের মধ্যে দুই ধরনের প্রবণতা দেখে ।
আমরা সফলদের গুন গাই তা তিনি যেভাবেই হন না কেন। যেই ছেলেটা মধ্যপ্রাচ্যে গিয়েছিল দালালের হাত ধরে। তারপর সব হারিয়ে দেশে ফিরেছে। সে তো ফিরেছে বাধ্য হয়ে। ছেলেটা তার পরিবারের হাল ধরতে চেয়েছিল। অন্য লোকে দুরের কথা, দেশের প্রতি টান সে নিজেই টের পায়নি কখনো।
আর যেই লোক সর্বস্বান্ত হননি। বিদেশে দুহাতে টাকা কামিয়েছেন। দেশে স্কুল -কলেজ- মাদ্রাসা দিয়েছেন তিনি হয়েছেন জন নন্দিত।
আর যে কখনো ফিরতে পরেনননি -নিজের স্ত্রী সন্তানের নিরাপত্তা/ভবিষ্যতের কথা ভেবে, প্রেমিকার অন্যত্র বিয়ে হয়ে যাওয়ায় - ক্ষোভে, বিদেশী বউ এর অনিচ্ছার কারণে , অথবা, না জানা কোন কারণে, যার দেশে ফেরাটা রাজনীতির মাঠে ,সমাজের বদলে যাওয়ায় কিংবা সাহিত্যের জগতে কোনো কাজেই হয়ত আসতো না - তিনি বিদেশের বাড়িতে ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় উন্নত জীবন যাপন করেন; আর ঘুমের ঘোরে অথবা আনমনে ছেলে বেলায় বাড়ির পাশের বরই গাছটার কথা , পাড়ার বন্ধুদের সাথে রাস্তার ক্রিকেট খেলার কথা ভেবে বিষন্ন হন, তার খবর কে ই বা নিয়েছে কবে ?
৪. জুলাই ৪, ২০১৪
২০১৪ সালের বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল হয়ে গেল। জার্মানি শেষ পর্যন্ত দুর্দান্ত খেলে শিরোপা জিতে নিল । নিজে সাপোর্টার বলেই একটু উচ্ছসিত আমি নিজেও । এলাকার সমবয়সী সবাইকে রোজার দিনে কিছু খাওয়ানোর আশ্বাস না দিয়েই বাসায় ডেকে এনেছিলাম। সাদাত-তিয়াসা পরিবার , নাবিলা আর এরফান। সামি আর তাপসের সঙ্গে এমনিতেই সবসময় খেলা দেখি , ওরা তো আছেই ।
আজিম ভাই নাবিলার হাসব্যান্ড। বাকিরা সবাই মোটা মুটি ব্রাজিল ভক্ত হলেও তিনি নিজে মূলত আর্জেন্টিনা সাপোর্টার। নিজের দলের খেলা কত গুলো শত্রু সমর্থকের মাঝে বসে দেখা সমীচীন মনে না হওয়াতেই হয়ত, উনি এই ভিড়ে শামিল হয়ে খেলা দেখতে এলেন না। বউ কে পাঠিয়ে দিলেন। সময়মত সবাই চলেও আসলো। বিশ্বকাপ শুরুর আগেই ঘোষণা দিয়েছিলাম জার্মানির প্রতিটা জয় এর বিপরীতে আমি একবার করে বিরিয়ানি খাওয়াব । রোজার মাসের মধ্যে পরে যাওয়ায় ফ্রান্স আর ব্রাজিল এর বিপক্ষে জয়ের বিরিয়ানি রান্না টা বাকির খাতায় চলে গিয়েছিল। ভেবেছিলাম ঐদিন খেলা শেষে বিরিয়ানি রান্না হবে । সবাইকে নিয়ে বিরিয়ানি খেয়েই না হয় ইফতার করলাম। অবশ্য জার্মানি যেভাবে ম্যাচ জিতলো। টেনশন এ ধরে গেল আমার মাথা ব্যথা । বিরিয়ানি রান্নার ইচ্ছার কথা কাউকে জানাইওনি তাই। সবাইকে বিদায় দিলাম খেলার পরই।
জার্মানি সাপোর্টার হয়েছি ঠিক কবে থেকে স্পষ্ট মনে পড়ে না। ১৯৯৮/৯৯ এর দিকে হবে হয়ত । আমার স্মৃতি শক্তির শেষ সীমায় একটু যদিও বা উকি মারে তো ১৯৯৪ এর বিশ্বকাপের খেলাগুলা হত বেশ রাতে। গভীর রাতে ভাইরা একসাথে বসে খেলা দেখা চলত । খেলা শেষ হতে হতে ভোর হয়ে যেত। তারপর স্কুল।আমার ভাই-বোন্ আর নিকটতম প্রতিবেশীরা আর্জেন্টিনার ম্যারাডোনার বিশাল ভক্ত । ওদের মনে ১৯৯০ এর জার্মানি র কাছে আর্জেন্টিনার হার এর দগদগে ঘা তখনো জ্যান্ত। জার্মানরা যার বিপক্ষেই খেলুক না কেন সবাই ওদের বিপক্ষে। সেই বিশ্বকাপে বুলগেরিয়ার কাছে হেরে জার্মানি বিদায় নিল। জার্মানি কে সবাই এতটা অপছন্দ করত যে ওদের জন্য মনের অজান্তেই মায়া জন্মে যাচ্ছিল আমার । যদিও ওরা খেলত তখন খুব নেগেটিভ। আর তাই জার্মানদের সমালোচনাও হত খুব বেশি।
১৯৯৮ এ আপসেট এর জন্ম দিয়ে ক্রোয়েশিয়ার কাছে হেরে বিদায় নিল জার্মানি।
২০০২ এ রানার-আপ হলো ওরা তারপর ও খোচার কমতি নেই। কারণ ফাইনালে উঠতে দ. কোরিয়া , U.S .A র মত সবচে দুর্বল দলগুলোর সাথে খেলে এসেছে জার্মানি। এতদিনে আমি জার্মান দের পাড় সমর্থক। কারণ কিন্তু পুরোপুরি অ-ফুটবলীয় । আর্জেন্টিনা সমর্থকরাই যে শুধু নয় ,পুরো পৃথিবী যে ওদের অনেক ঘৃনা করে একটু সেটা টের পেলাম commandos গেম খেলে। যেই গেমের মূল মিশনই হচ্ছে বিভিন্ন ভাবে জার্মান সৈন্য মারা। তত দিনে আইনস্টাইন , ম্যাক্স প্লান্ক দের নাম জানি। জানি এই জাতি যুগে যুগে এমন সব মনিষীদের জন্ম দিয়েছে যারা পৃথিবীর সভ্যতার গতি প্রকৃতি বদলে দিয়েছে। জার্মানদের প্রতি সবার ঘৃনার কারণেই হয়ত জাতি হিসেবে ওদের প্রতি আমার একধরনের শ্রদ্ধা জেগে উঠেছিল। ১৯৪৫ এ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধংসস্তুপের উপর দাড়িয়ে থেকে প্রথম ফুটবল বিশ্বকাপেই পশ্চিম জার্মানি শিরোপা যেতে। এরকম একটা কাম ব্যাক এর ইতিহাস আমাকে অনুপ্রানিত করে ওদের সমর্থন দিতে। তাই সম্পূর্ণ অফুটবলীয় কারনে হলেও আমি ততদিনে বিশ্বকাপ ফুটবলে ঘোর জার্মান সমর্থক। কিন্তু ওরা যতটা না খারাপ খেলত তার চে বেশি খেলত বোরিং আর নেগেটিভ। আসলে ওদের তখনকার দলের কম্বিনেশনে ওই ধরনটাই ছিল পারফেক্ট।জার্মানি সমর্থক হিসেবে ম্যাচ জিতেও টিটকারী শোনা ছাড়া আর কোন লাভ ই হয় নাই ।
২০০৬ বিশ্বকাপ এ আমি তখন বিশ্ববিদ্যালয় এর হল এ থাকি । এর মধ্যে ২০০৩/৪ এর দিকে সালে জার্মান ফুটবল টীম কে ঢেলে সাজানো হয়েছে। দলে নেয়া হয়েছে বেশ কিছু নতুন খেলোয়াড় । কোচ হয়ে এসেছেন ক্লিন্সমান। তিনি জার্মান দলের খেলার ধরনটাই বদলে দিলেন।ওদের খেলা চরম রক্ষনাত্মক থেকে হে উঠলো তুমুল আক্রমনাত্মক।কোস্টারিকার মত দলের সাথে প্রথম ম্যাচএ ২ টা গোল খেয়ে বসলো; আর করলো ৪ তা। সেই খেলে ফ্রিনস এর গোল টা অনেক দিন পর্যন্ত ওই বিশ্বকাপের সেরা গোল হয়ে ছিল। এক দম নতুন দল হিসাবে প্রত্যাশার অতিরক্ত খেলে ওরা তৃতীয় স্থান পেল।হতাশ হলেও এই প্রথম অনেক গলাবাজি করে বিশ্বকাপ দেখলাম।
২০১০ এ প্রথম ম্যাচ এ ৪-০ তে অস্ট্রেলিয়া কে হারিয়ে শুরু করলো জার্মানি। ওদের খেলা দেখে এইবার আমি সেইরকম আশাবাদী কাপ ওরাই নিবে। স্পেন এর তখন দোর্দণ্ড প্রতাপ। সুইজার ল্যান্ড এর কাছে ১-০ স্পেন হেরে যাওয়ায় আমার আসার পারদ চরমে - স্পেন কে হারানো অসম্ভব নয়। গায়ে পড়ে অন্য সমর্থক দের সাথে ঝগড়া করে আসি। সবচে মজার ব্যাপার জার্মানি হারবে আর আমাকে সেই সুযোগে আচ্ছামত পান দেয়া যাবে ,এই আশায় বন্ধুরা আমার সঙ্গেই খেলা দেখতে বসত। সার্বিয়ার কাছে হারার পর পুরা একদিন ফোন বন্ধ রাখতে হয়েছিল আমাকে।কিন্তু ফলাফল বেশিরভাগ সময় উল্টাটাই হত। যাই হোক, আবারো বাদ পড়ল জার্মানি। এবং এবারও সেমিফাইনালে । এনিওয়ে দেয়ার ইস অলয়েইস এ নেক্সট টাইম।
২০০৬ আর ২০১০ এ জার্মান দের প্রতিটা গোল এর জন্য বন্ধুদের coke খাইয়েছিলাম। প্রত্যেকটা বোতলের গায়ে লিখে রাখা হয়েছিল কোন বোতলটা কোন গোল উপলক্ষে। সেগুলো সংগ্রহে ছিল অনেক দিন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত শহীদ স্মৃতি হল এ বন্ধু শরীফ এর রুম এ আশ্রয় হয়েছিল ওদের। তারপর কি হয়েছে খোজ নেয়া হয় নাই।
২০১৪ এলো এবার ও খেলা দেখে মনে হচ্ছে জার্মানি কাপ নিতেই পারে। বিরিয়ানির ঘোষণা দিয়েছিলাম ঠিকই । কিন্তু মনে সাহস পাই না । এই প্রথম আমি দেশের বাইরে বসে বিশ্ব কাপ দেখছি। জার্মানি কে এতদিন অকারণেই সাপোর্ট করতাম। এখন একটা শক্ত কারণ ও তৈরী হয়েছে - আমি একটা জার্মান কোম্পানি তে চাকরি করি । 'নুন খাই যার গুন গাই তার' টাইপ লজিক।
আমার বন্ধু ভানু , জাতিতে ভারতীয়। ফাইনালএর দিন এসে বলল সে জার্মান ভক্ত "আমি জার্মানি সাপোর্টের ঈঈঈঈঈঈঈঈই " .. ।আমি মুখ ফুটে বলতেই পারলাম না যে, আমিও তাই ।মুখে আসলো না। আমার ইগো অত্যন্ত প্রবল।একটা ভারতীয়র সামনে আমি ফুটবলে ভিনদেশকে সাপোর্ট করি এইটা বলতে একটু বাধলো।
নিজের দেশে সারাদিন টিভিতে মুক্তিযুদ্ধের অনুষ্ঠান কিংবা মুজিব-জিয়ার ঠুনকো আদর্শ আমার যেই স্বজাত্যবোধ জাগাতে পারে নি। ৩ বছরের প্রবাস জীবন তাকে বেশ যত্নেই লালন পালন করে গড়ে তুলেছে । আমাদের বন্যা নিয়ে যখন এদেশের কেউ কিছু বলে। তখন আমিও বলি আমাদের 'ফ্লাড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম' থেকে চাইলে তোমরাও কিছু শিখতে পারো। ২ দিন বন্যা হলে তোমরা টিভিতে সারাদিন তাই নিয়ে নিউজ কর। আমার দেশে মানুষ মাসের পর মাস বন্যার সাথে লড়াই করে টিকে থাকে। আমাদের বিজ্ঞানীরা এমন ধান আবিষ্কার করেছেন যা বন্যার পানির লেভেলের উপরে মাথা তুলে দাড়িয়ে থাকে। আর তাই আমাদের এখন বন্যায় ফসল নষ্ট হয় না আর। বন্যায় ভেসে আসা পলি তে আমাদের দেশের মাটির লেভেল বাড়ছে। আর তাই গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর প্রাকৃতিক সমাধান হিসাবেই বন্যা আমাদের প্রয়োজন। আমরা বন্যা কে নিজেদের কাজে লাগাতে শিখেছি। আমাদের গার্মেন্টস শিল্পের অসন্তোষ নিয়ে যখন বলে আমি তখন ওদের ওয়াল -স্ট্রিট দেখিয়ে দেই।
জানি সবই কৌশলে সভ্যতার মোড়কে পেচিয়ে পরিবেশন করা যুক্তি।
তারপরও আমাদের দেশের মানুষের নানা ক্ষেত্রে অসহায়ত্বর কথা মেনে নিয়ে নিজের দেশকে ছোট করতে পারি না। জার্মানি - ব্রাজিল বা আর্জেন্টিনা র মত দেশের এমন উত্তাল সমর্থন দেয়াটা যে কতটা দীনহীন মানসিকতার তা বুঝতে আমার কেটে গেছে জীবনের অনেক গুলো বছর। মনে মনে এখন জার্মানি সমর্থন করে খেলা দেখতে বসলেও মনের অনেক গভীরে একটা আফসোস উকি দেয়। আমার দেশ বিশ্বকাপ খেলে না। নিদেন পক্ষে অলিম্পিকও না। জাতি হিসাবে আমাদের অর্জন প্রায় শুন্যের কোথায়।
তারপরও আমাদের দেশের মানুষের নানা ক্ষেত্রে অসহায়ত্বর কথা মেনে নিয়ে নিজের দেশকে ছোট করতে পারি না। জার্মানি - ব্রাজিল বা আর্জেন্টিনা র মত দেশের এমন উত্তাল সমর্থন দেয়াটা যে কতটা দীনহীন মানসিকতার তা বুঝতে আমার কেটে গেছে জীবনের অনেক গুলো বছর। মনে মনে এখন জার্মানি সমর্থন করে খেলা দেখতে বসলেও মনের অনেক গভীরে একটা আফসোস উকি দেয়। আমার দেশ বিশ্বকাপ খেলে না। নিদেন পক্ষে অলিম্পিকও না। জাতি হিসাবে আমাদের অর্জন প্রায় শুন্যের কোথায়।
সভ্যতার সেই কবে এই পশ্চিমে এসে খুটি গেড়েছে। তাকে এই পূর্বে নিয়ে আসতে আর কত দিন অপেক্ষা করতে হবে? -সুনীল আক্ষেপ করেছিলেন। সে আক্ষেপের তীব্রতাটা প্রতিনিয়ত বেড়ে উঠছে জার্মানি বা ব্রাজিল প্রতিটা বিশ্বকাপ বিজয়ে ,আমেরিকার মঙ্গলে অভিযানে , পদার্থ রসায়নে অন্যদের নোবেল পুরস্কার বিজয়ে । এরকম প্রতিদিনের জন্যে আর কতদিন অপেক্ষা করবে বাংলাদেশ?
৫. অক্টোবর ২৬,২০১৪
এক সপ্তার উপর হয় আমার বাম চোখ লাফায়। এই লাফানির কোনো বিরাম নাই। যতক্ষণ জেগে আছি সে লাফাচ্ছে। তিতি বিরক্ত হয়ে একটা যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিলাম -ডাক্তারের কাছে যাব। যুগান্তকারী এই অর্থে - এই দেশে আসার পরে আজ অব্দি অসুখে পড়ে ডাক্তারের কাছে যাওয়া হয়নি। ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ওয়েবসাইট এ ডাক্তার খুজতে লাগলাম। দেখতে ভালো, লোকে বলেও ভালো এরকম একজনকে পাওয়া গেল আমার বাসার ৫ মাইল দুরে - কাছেই। ফোন দিয়ে এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে গেলাম কাল দেখা করতে।
এই জীবনে যত জন ডাক্তারের কাছে গিয়েছি একবার হলেও জিজ্ঞেস করেছে "তুমি এত শুকনা কেন ? " খাওনা ? হেন্না-না তেন্না-না। কিন্তু এবার আধা ঘন্টার জেরা আর এক্সামিন করার পর ডাক্তারের যুগান্তকারী মন্তব্য - "ইউ আর ঠু হেলদি টু হ্যাভ প্রেসক্রিপশন মেডিকেশন " .... ড্যান মজিনার "বাংলাদেশ বিকামিং ওয়ার্ল্ড রেনাউন্ড ব্র্যান্ড " এর মতন শোনালো একটু ..... ঠা -ট বজায় রেখে বললাম -"আই নো-ও ! "... "হাউ এভার ! মাই আই টুইচেস " .... অতঃপর "হোয়াই আই টুইচেস " এর উপর জ্ঞানগর্ভ অনেক কথা বার্তা বললেন এবং আমার অক্ষরজ্ঞানের তুমুল পরীক্ষা নিলেন। এবং সত্যি সত্যি আমাকে কোনো ওষুধ না দিয়ে একগাদা উপদেশ প্রেসক্রাইব করে দিলেন। এখানেও একটা যুগান্তকারি ব্যাপার হচ্ছে -ডাক্তার ওষুধ কিম্বা টেস্ট কিছুই প্রেসক্রাইব করছে না এইটা আমার অভিজ্ঞতায় প্রথম। তবে একটি পিসি ইউসার ফ্রেন্ডলি চশমা খরিদ করার পরামর্শ দিলেন -" ইউ ক্যান ট্রাই ইট ইফ ইউ ওয়ান্ট টু " । উপদেশগুলোর মধ্যে একটা আবার "টেন্স টু যুগান্তকারি" .... বেশি রাত জাগা যাবে না এবং ঘুমানোর আগের দুই ঘন্টার মধ্যে চোখের দুই ফুট এর মধ্যে থাকা কোনো লাইট এমিটিং ডিভাইসের দিকে তাকানো চলবে না । অর্থাত কী মোবাইল , কী ল্যাপটপ -রাতে সব হারাম। খোমাখাতায় কিম্বা অন্তর্জালের চিপাগলিতে ঘুরাঘুরির উপর অনেকটা কারফিউ জারি করার মত হলো ব্যাপার টা।
"রাইতের বেলা তাইলে করমুটা কি ?"
বই পড়া যায়; বই তো আর লাইট এমিটিং ডিভাইস না । রকিব হাসানের তিন গোয়েন্দার পিঠে চেপে আউট বই এর জগতে চড়ে বেড়ানোর যে অভ্যাস তৈরী হয়েছিল সেটা চাপা পড়েছে গ্রাজুয়েট স্টাডি আর নিরুদ্দেশ ঘুরাঘুরির চাপে। তাকে আবার টেনেটুনে ঠেলে দাঁড় করানোর চেষ্টা কম চলেনি। তাই সারা বছর ধরে সুযোগ পেলেই কেনা হয়েছে বই। ধারেও নেয়া হয়েছে কিছু। কিন্তু পড়া হয়নি। নিষেধাজ্ঞার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় কোমা তে থাকা অভ্যাসটা যদি জেগে উঠতে পারে মন্দ কি ?
৬. নভেম্বর ২৬,২০১৪
এরিস্টটল বললেন - ফাইজলামির একটা সীমা আছে, তবে আতলামি অসীম।
আইনস্টাইন বললেন - বস আপনার বয়স হয়েছে , কথা একটু ভুলভাল বলেন। আর্কিমিডিস আপনের চে কত ছোট , সে-ও যাচাই না করে কোনো কথা বলে না ; তাকে দেখেও তো শিখতে পারেন । নেক্সট টাইম এইসব তত্ত্ব দেওয়ার আগে আমাকে একবার জিগ্গেস করে নিবেন।
আমি পরীক্ষা করে দেখেছি , থুক্কু অংক করে পেয়েছি, থুক্কু বারবার মুখ দিয়ে যা করি নাই তাই আসতে চায়। আসলে আমি খুব করে ভেবে দেখেছি আতলামি আর ফাইজলামি এক ই জিনিস। মহা বিশ্বে মোট আতলামি আর ফাইজলামির পরিমান আসলে ধ্রুব। বেশি বেগে ঝাকি দিলে এরা একটা আরেকটায় কনভার্ট হয়ে যায়। একজন আতেল কে আলোর বেগে ঝাকি দিলে তার সমস্ত আতলামি ফাইজলামি তে কনভার্ট হয়ে যাবে। ঠিক তেমনিভাবে উচ্চ বেগে বেতের বাড়ি দিলে কঠিন ফাজিল পোলাপান ও আতেল এ পরিনত হয়। বন্ধুবর ম্যাক্স প্লাঙ্ক এর পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে অনেকক্ষণ চিন্তা ভাবনা করার পর আমি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি।
হায়গেন্বের্গ এসে বললেন : আতলামি আর ফাইজলামি কখনো একসঙ্গে চলতে পারে না। একজন আতেল লোক ফাজিলের যেকোনো কথাকে আতলামি ভেবে বসবে। আর ফাজিল আতেলের যেকোনো কথা নিয়েই ফাইজলামি করবে।
এমন সময় এসে হাজির হলেন বাংলার মরমী সঙ্গীতশিল্পী শুভ্রদেব তিনি গাইলেন -
আতেল আতেল করিস যারে
সে তো আতেল নয়
ওরে আমার আতেল মন
পটর পটর বন্ধ কইরা
চুপটি কইরা শোন
মরাল অফ দা স্টোরি : আপনি যদি দেশের রাজপুত্রের নাম কিছু বলেন তাহলে কিন্তু কেস খাবেন ধর্মীয় অবমাননার । ডিসেম্বর মাস নকিং এট দা ডোর , চেতনা এট ইটস peak ।
৭. মে ২১ , ২০১৫
আমার জন্ম রোহিঙ্গা শিবিরে হতেই পারত। বাংলাদেশে এরকম সোয়া ৪ কোটি মানুষ আছে যাদের ১ দিনের আয় এদেশে একটা গড়পরতা মানুষের ১৫ মিনিটের আয়ের চেয়ে কম। ঐসব পরিবারের যেকোনো একটায় আমার জন্ম হতেই পারত। আমি হয়ত সাগরে ভেসে যাওয়া নৌকায় চেপে বসতেই পারতাম বেনিয়াদের আশ্বাসে। কোনো ভাবে উপকূলে পৌছুতে পারতাম হয়ত। জঙ্গলে বাঘের খাদ্য না হয়ে , অথবা দালালের ক্ষুরধার ছলে বিভ্রান্ত হয়ে কবরস্থ হবার আগেই হয়ত পেয়ে যেতাম একটা নির্মান শ্রমিকের কাজ। পেটেভাতে হয়ত বেচে থাকতে হত না আমাকে। কিছু টাকা পয়সা জমেই যেত বছর শেষে।
পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষের স্বপ্নের শেষ সীমাটা এইরকমই।
আমাকে এমন স্বপ্ন দেখতে হয়নি। জন্মের আগেই ওভারিয়ান লটারিটা জিতে নিয়েছিলাম বলে। আমার বাবা-মায়ের নিজের বলার মত একটা দেশ ছিল, তাদের সেখানে থাকার মত জায়গা ছিল, বিপদে পাশে দাড়ানোর মতন প্রতিবেশী ছিল, আমাকে স্কুলে ভর্তি করানোর ইচ্ছা এবং সামর্থ্য ছিল। I am born lucky.