আমি আমেরিকায় অবতীর্ন হই কলম্বাসের ৫১৮ বছর পর। প্রথম যে ফাস্টফুড খাই তার নাম চিকেন বুরিতো।একটা মেক্সিকান খাবার, রুটির ভেতর ভাত আর টমেটোর প্রলেপ দেয়া সিদ্ধ মাংস। অর্ডার দেবার সময় কাউন্টারের ভদ্রলোক জিজ্ঞেস করলেন "for here or to go" মানে "খাইবা ? না লইয়া যাইবা?"। কিরা কাইট্টা কইতারি আমি একটা শব্দও বুজতারি নাই। আমার মনে হল আমি শুনলাম "আইয়ইয়ো" । আমার সহজাত প্রত্যুত্তর "what?" তার প্রত্যুত্তর "আইয়ইয়ো" ..."what?"..."আইয়ইয়ো" ..."what?"..."আইয়ইয়ো" ... কে এসে উদ্ধার করেছিল মনে নাই । সম্ভবত ইশান। সেই থেকে ফাস্টফুড শপে অর্ডার দেয়া আমার কাছে চরম ভীতিকর ব্যাপার। কিন্তু রান্নাবান্না পারি না।ফাস্টফুড ছাড়া উপায় নাই ।
বুরিতো |
এখন আমি ফোনে পিতজা অর্ডার দেই।ভালোই দেই।বুঝতেও পারি। বুঝাইতেও পারি।তবে কোন চিজটা সুইস কিম্বা কোনটা আমেরিকান আর কোনটা পেপারজ্যাক মাঝেমধ্যে গুলায় যায়।মোতসারেলা বা ক্রিম চীজ চিনি দেখেই।"সেই আমি থেকে এই আমি" বিবর্তনের চাক্ষুষ প্রমান।
আমার এক বাংলাদেশি বন্ধু একবার অফিসে তার একগাদা য়্যোরোপিও কলিগের ভীড়ে বসে বলেছিল "চীজের এত্তরকম নাম দেওয়ার কি মর্তবা? সবই তো এক রকম।" য়্যোরোপিওরা যেরকম টাসকি খাইসে 'ব্যাপকের তুলনায় কিসুই না' বললেও কম বলা হয়।পরদিন তাদের একজন সত্য সত্য 6/7 রকমের পনির নিয়ে এসেছিল বন্ধুবরকে দেখানোর জন্য যে 7 খানার টেষ্ট 7 রকমের। বলতে বাধা নেই আমার বন্ধুর কাছে চীজের টেস্ট সেবারেও সব একই রকম লেগেছিল।"কিছু স্বাদের শত চেষ্টায়ও বিবর্তন হয়না" তার চাক্ষুষ প্রমান।
কত্ত রকমের যে চীজ |
চীজ নামক বস্তু আমাদের ফ্রিজে বছরে একদিনের জন্য জায়গা পায়না কিন্তুক কোন একটা এলাকার মানুষ চীজের মাসব্যাপী মেলা বসায় দিতে পারে। বৈশাখের একতারিখে কেউ প্রতিদিনের মতই সকাল বেলা রিকশা চালাতে যাবে, কেউ কেউ আজকে দিনটা উতসবের উপলক্ষ্য মেনে সেই রিকশায় বেড়াতে বের হবে। সংগে সমবয়সী বন্ধুও থাকতে পারে বউও থাকতে পারে মা-বাবাও থাকতে পারে।কেউ দোকানে হালখাতা আয়োজন করবে কেউ সেই হালখাতার অনুষ্ঠানে শুধুই মিষ্টির লোভে যাবে। কেউ ভীনদেশি, হিন্দুয়ানি সংস্কৃতি ভেবে নিয়ে আস্তাগফিরুল্লাহ পড়বে।কি বৈপরিত্য, "হোয়াই দিস কোলাবেরি " ......মাথা ঘুরায়। কথা হইল কথা সেইটা না, কথা হইল আমার কিছু ভাল লাগুক নালাগুক অন্যের সেই কিছু একটা ভাল লাগতেই পারে।সেই কিছু একটা গরুর মাংস হইতে পারে , মঙ্গল শোভা যাত্রাও হইতে পারে।কিনতু অন্যের ভাল লাগা না লাগার উপর নিজের বাম হাতের যে কোন অধিকার নাই সেইটাও মাথায় রাখা লাগবে।
কথা অনেক ঘুইরা গেছে ;বলছিলাম বুরিতোর কথা। সেই বুরিতো প্রথমদিন খেয়ে অতি জঘন্য লেগেছিল।আমেরিকান কোকাকোলার নিদারুন স্বাদের নিচে সেই বিস্বাদ চাপা দিয়ে আস্ত বুরিতো পেটে চালান দিয়েছিলাম। আজকাল বুরিতো তেমন আর খারাপ লাগে না । জীবনের এক পঞ্চমাংশ এই বিধর্মি দেশে পার করে আমার স্বাদেন্দ্রীয় বিবর্তিত হয়েছে বোধ হয়।আগ বাড়াইয়া কেউ আবার ভাইবা বইসেন না আমি শুয়োর খাই কিম্বা চার্চে যাই কিম্বা রঙিন পানিতে আসক্ত।আমি নিতান্তই সাদাসিদা মানুষ ধার্মিক না হতে পারি কিন্তু আল্লা(হ)রে ডরাই।
এইখানে শিক্ষনীয় হইল কালকে যা আমার অপছন্দের ছিল আজ আর তা নাই । সংস্কৃতি জিনিসটাও সেইরকমই কাল যা ছিল আজ আর তা নাই।সংস্কৃতিকে জোর করে চাপায় দেয়া যায়না জোর করে কেড়েও নেয়া যায় না।মঙ্গল শোভাযাত্রা পলাশি শাহবাগ চারুকলার পর্যন্তই। ওটা এখনো সর্বজনীন নয়, ...পান্তা-ইলিশ... তাও মনে হয় শুধু ঢাকাতেই । তবে লাল সাদা কাপড় পড়ে ঘুরতে বের হ্ওয়াটা মনেহয় আগের মতই আছে সারাদেশে। এদিকে আমি আমার বাসায় নতুন সংস্কৃতি শুরু করব ভাবছি।আমি আর আমার রুমমেট একখানা মাছ খুজে পেয়েছি এই দেশে, যা খেতে 76.54321% ইলিশ মাছের মতন । দাম এইখানে ইলিশের দামের তিন ভাগের একভাগ।পান্তা খাইতে ভাল্লাগে না।তবে এই মাছটা খাইতে ভাল্লাগে।তাই বৈশাখে এইটা পান্তা ছাড়াই খাব। আমার বাসায় আজকে থেকে এইটাই সংস্কৃতি;নতুন কোন সংস্কৃতি আবিষ্কারের আগে পর্যন্ত। Tenualosa ilisha -র উপর বাংলাদেশে নিষেধাজ্ঞা জারি আছে । শেখাসিনা নাকি খাবে না।আমিও খাবনা। কিন্তু Alosa sapidissima - র উপর আমেরিকায় কোন ব্যান নাই।আমি খাব, ইলিশানুভুতির তোয়াক্কা না করেই খাব।
আমেরিকান ইলিশ মাছ |
পয়লা বৈশাখ সবার মনের মতন হোক।শুভ নববর্ষ।
বৈশাখ ১, ১৪২৩। মিলফোর্ড, ওহাইয়ো ।
April 13, 2016