Monday, July 27, 2015

ডিমের পাঁচ মিনিটের পাঁচ প্যাচাল

Posted by with No comments


সত্যি বলছি ভাই
ডিমের মতন মহান খাবার ত্রিভুবনে নাই




ডিম হল অলস মানুষের প্রিয় খাবার। 1মিনিট থেকে 5 মিনিট সময়ের মধ্যে রান্না করা যায় এমন রেসিপি ডিমের যত আছে আর মনে হয় কারও তত নাই । সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে সবচে শর্টকাট ব্রেকফাস্ট হল কর্ন ফ্লেক্স ,ওটমিল সাথে দুধ। ঢালো - গরম করো - খাও। আমি আরও আইলসা। ঢালো আর খাও।

একটানা সেরিয়াল কাহাতক আর খাওয়া যায়। তাই ভেরিয়েশন আনতে ডিম । কয়েকটা আইটেম এর একটা লিস্ট করে ফেল্লে কেমন হয় দেখি।এত সহজ রেসিপি যে এক্সপার্টরা দেখলে হাসবে-এই জিনিসেরও রেসিপি লাগে ?

....হ ভাই লাগে। জিবনে যে গরম পানি ছাড়া কিস্যু রান্দে নাই হের লেইগা ডিম ভাজতেও রেসিপি লাগে। যাউগ্গা কথা কম কাজ বেশি । এখানে কয়েকটা রেসিপি নোট করলাম যেগুলো ৫ মিনিটেরান্না করা সম্ভব।

১. ডিম পোচ -

একটা ফ্রাইপ্যানের সারফেস পরিষকার করে মুছে নিয়ে  মাঝারির চে একটু বেশি আচে প্যান গরম করে নিতে হবে। এরপর সামান্য তেল দিয়ে মুছে নিতে হবে।এরপর তাতে দুটো ডিম পাশাপাশি ছেড়ে দিতে হবে। ১ মিনিটেই হয়ে যাবে। (আমি তিন মিনিট রাখি)। একটু কাঁচা রাখতে চাইলে উলটানোর দরকার নাই।উল্টে দিলেই দুইপাশ ভালভাবে পোচ হয়ে যাবে।



২. ডিম পাটোয়ারি

সাধারন ডিম পোচের সাথে এর পার্থক্য সামান্যই। এক্সট্রা চিয়ার লিডার হিসবে হিসেবে পেয়াজ আর মরিচ লাগবে । আর লাগবে একটু লবন। পেয়াজ আর মরিচ ভাল করে কুচি কুচি কেটে নিতে হবে। এই পেয়াজ এবং মরিচের পরিমান নিজের মনমত ঠিক করে নিতে হবে।ডিম পোচের মত করে পাত্রে ডিম ছেড়ে দেবার সাথে সাথেই ডিমের উপর কুচি কুচি করে কাটা পেয়াজ আর মরিচ ছড়িয়ে দিতে হবে। তারপর একটু করে লবন ছিটিয়ে দিতে হবে। এই ডিমের একপাশ ভাল রান্নাহবে অন্য পাশ আধাআধি হবে।দুইপাশই ভাল করে করতে চাইলে ঢাকনা দিয়ে দেয়া যেতে পারে অথবা সাবধানে উল্টে নিতে হবে।

৩. ডিমভাজা

এজন্য শুরুতে পেয়াজ মরিচ কুচিকুচি করে কেটে নিয়ে একটু লবন মাখিয়ে  বাটিতে নিয়ে চটকে নিতে হবে। স্বাদের জন্য পেয়াজ মরিচের সাথে ধনিয়া পাতা অথবা পুদিনা পাতা কুচি কুচি করে কেটে দেয়া যেতে পারে (মাই ফেভ)।এরপর দুটো ডিম ফাটিয়ে বাটিতে নিয়ে চামচের সাহায্যে ফেটে নিতে হবে।

কড়াই বা প্যান ধুয়ে মুছে গরম করে নিয়ে তাতে অল্প তেল ছেড়ে দিতে হবে।তেল গরম হলে তাতে ডিমের মিশ্রন ঢেলে দিতে হবে।

পাত্রের গায়ে লেগে থাকা ডিম তাড়াতাড়ি রান্না হয়ে গিয়ে একটা লেয়ার তৈরী করে যার কারনে উপরের অংশ ভাজা হতে একটু সময় লাগে। এসময় প্যান একটু কাত করে একটু করে ঘুরিয়ে দিয়ে ডিমের মিশ্রনটাকে সুষমভাবে ছড়িয়ে দেয়া যায় অথবা চামচ বা চটা দিয়ে ভাজা হয়ে যাওয়া নিচের অংশ একটু করে ভেঙে/থেতলে দিতে হবে তাহলে উপরের তরল মিশ্রন পাত্রের সংস্পর্শে এসে যাবে।

এর পরও উপরের অংশ নরম থেকেই যাবে। একবার উল্টে দিলেই দুইপাশ ভাজা হয়ে যাবে। আর এই উল্টানোতেই আসল রাধুনির কেরামতি। পারলে এক চান্সে ডিম উল্টানোর টেকনিকটা রপ্ত করে নেয়া যেতে পারে। বেশি কেরামতি দেখাতে গেলে জামাকাপড় বা ফ্লোর নষ্ট করার রিস্ক থেকে যাবে কিন্তু।

৪. মাশরুম / স্পিনাচ (পালংশাক) অমলেট

মাশরুম ভাল করে ধুয়ে নিয়ে পছন্দ মত শেইপে কেটে নিতে হবে। এই অমলেট দুইভাবে করা যায়।দুইটার টেস্ট কিন্তু দুইরকম।

সিস্টেম - ১:
ডিমভাজার মত করে মি্শ্রন তৈরী করতে হবে। মরিচ পিয়াজ চটকে নেবার পর মাশরুমসহ ডিম ফেটে নিতে হবে। বাকি নিয়ম সাধারন ডিম ভাজার মতই। তবে বাড়তি কাজ হিসেবে শেষ এক মিনিটের আগে গোল হয়ে থাকা অমলেটের অর্ধেক কে বাকি অর্ধেকের উপর এনে দিয়ে অর্ধচন্দ্র শেইপ দিতে হবে। সোজা :) ।





সিস্টেম - ২:
এই সিস্টেমে পিয়াজ মরিচ চটকানো হয়ে গেলে তাতে মাশরুম নিয়ে নেড়ে সুষম মি্শ্রন বানাতে হবে।

 অন্য একটা পাত্রে ডিম নিয়ে তাতে লবনসহ ফেটে নিতে হবে।

এবার চুলায় মাঝারির চে একটু কম আচে  ফ্রাইপ্যান গরম করে নিতে হবে। প্যানের টপ সারফেস তেলে ভেজা ন্যাকড়া/টিস্যু দিয়ে মুছে নিতে হবে।

এবার তরল ডিম পাত্রের ঠিক মাঝখানে সাবধানে একটু একটু করে সুষমভাবে ঢেলে দিতে হবে।

ডিমের একপাশ মোটামুটি হয়ে এলে উপরে মাশরুম পেয়াজ মরিচ আর যাকিছু আছে তার মিশ্রন সুষমভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে।

একমিনিট পর নিচের সারফেস শক্ত হয়ে এলে এক পাশের অর্ধেক উল্টে অন্যপাশের উপর এনে দিতে হবে। এভাবে একমিনিট রাখলেই ভিতরে মাশরুম এবং যা কিছু আছে তা মোটামুটি সিদ্ধ হয়ে খাবারউপযোগী হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে ভিতরের অংশ একটু নরম থাকবে। চুলায় বেশিক্ষন রাখলেই ভিতরেও আর নরম থাকবে না।তবে বাইরের অংশ পুড়ে যাবার রিস্ক আছে। একটা ভাল বুদ্ধি হল- অর্ধেক উল্টে হাফ মুন বানানোর পর সেইফ কোনো প্লেটে নিয় মাইক্রোওয়েভে 30 সেকেন্ড গরম করে নেওয়া। ব্যস।

***  মাশরুমের জায়গায় স্পিনাচ নিলেই স্পিনাচ অমলেট হবে। সংগে চাইলে টমেটো দেয়া যায়। তেলের সঙ্গে হালকা বাটার/চিজ ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে স্বাদ ভালো হয়।



৫. ডিম চাইনিজ

এইটার জন্য আগের দিনের লেফটওভার ভেজিটেবল লাগবে। আলুভাজি, তলানির ডাল, নিরামিষ এরকম যা কিছু রয়ে গেছে তার থেকে একটু একটু করে নিয়ে চামচ দিয়ে নেড়ে মেশাতে হবে। ডিমভাজির সিস্টেমে পেয়াজ মরিচের মিশ্রন বানাতে হবে।চুলায় ফ্রাইপ্যানে তেল গরম করে নিয়ে তাতে ডিমের মিশ্রনের অর্ধেকটা ঢেলে দিতে হবে। 15/20 সেকেন্ড পর তাতে বাসি তরকারির মিশ্রন ঢেলে দিয়ে হালকা করে নেড়ে দিতে হবে। এতে যাবে আরো এক মিনিট। খুন্তি দিয়ে পুরো জিনিসটা পাত্রের মাঝখানে জড়ো করতে হবে (স্তুপের মত নয়, ছড়ানোই থাকবে)। এরপর ডিম পিয়াজ মরিচের বাকি মি্শ্রন এর উপর ঢেলেদিতে হবে। খুন্তি দিয়ে আরকবার হালকা নাড়ত হবে। পরের একমিনিটেই তৈরী হয়ে যাবে ডিম চাইনিজ।




টিপস:

ডিম ভাজতে বেশি তেল লাগে না। পোচ করতে তেল না হলেও চলে। তাই তেল ভেজা ন্যাকড়া বা টিস্যু ব্যবহার করেছি আমি। আজকাল আমি সেটাও করি না। বাজারে তেলের স্প্রে কিনতে পাওয়া যায়। স্প্রে করে দিলে সময় বাঁচে আর বাঁচে হাত।

তেল হিসেবে ভেজিটেবল অয়েল, ক্যানোলা , সয়াবিন বা অলিভ অয়েল যে কোনটাই ব্যবহার করা যায়। ক্যানোলাতে ভাজলে একটু মনে হয় তাড়তাড়ি ভাজা হয়। যেসব খাবার মুচমুচে বানালে ভাল তাদের জন্য ক্যানোলা বেষ্ট। আমি অলিভ অয়েলের ফ্যান ; বাসায় গন্ধ কম হয়  :P ।