...

এসেছিস যখন দেয়ালে একটা আঁচড় কেটে যা

Wednesday, June 1, 2016

জলপ্রপাত আর বাতিঘরের সন্ধানে...

Posted by with No comments

মেমোরিয়াল ডে হচ্ছে আমেরিকার শহীদ দিবস। সোমবারের ছুটির কারনে লং উইকেন্ড আমেরিকাবাসীর জন্য ভ্রমনের বিশাল উপলক্ষ্য।এবছর নাকি ৩.৮ মিলিয়ন মানুষ শুধু মাত্র ভ্রমনের জন্য ঘর থেকে বের হয়েছে। আমরাই বা আর বাদ পড়ব কেন। দিনা আর আমি মিলে দিনব্যাপি ঘরাঘুরি দিয়ে ফেললাম ওহাইওর উত্তরে কায়াহাগা ভ্যালি আর লেক ইরির সৈকতে।কায়াহাগা ভ্যালিতে ওহাইওর একমাত্র ন্যাশনাল পার্ক, আর মার্বলহেডের বাতিঘর তো সেই কবে থেকেই বাকেট লিস্টে পড়ে আছে।ঘুম থকে উঠতে তাড়া ছিল না কোন।সকাল ৯ টায় বাসা থেকে বের হয়ে চেপে বসলাম ছোট শেভ্রলে মালিবুতে। গন্তব্য কায়াহাগা ভ্যালির সবচে দৃষটিনন্দন ঝর্না ব্র্যান্ডিওয়াইন ফলস।




ব্র্যান্ডিওয়াইন ফলস: 

জিপিএস ফলো করেই প্রপাতের সবচে কাছের পার্কিংস্পটে পৌছে যাওয়া যায়্।সেখান থেকে 1.5 মাইল দৈর্ঘ্যের হাইক অথবা ঢাল বেয়ে নেমে যাওয়া বোর্ডওয়াক। আপাত সহজ পন্থাটাই বেছে নেয়া হল। দর্শনার্থীদের চলার জন্য 
পাথুরে গিরিপথের ধার ঘেষে চলে যাওয়া কাঠের বাধানো পথ বেয়ে নেমে যাই আমরা।




গাছের ফাঁক থেকে একটু করে জলপ্রপাতের ভেসে ওঠা



সিড়ি থেকে দেখা যাচ্ছে অবজার্ভেশন ডেক


এখানে একটা সেল্ফি না হলে কিভাবে কি?


এক ভদ্রমহিলা এগিয়ে এসে আমাদের একটা যুগল ছবি তুলে দিলেন।




৬৫ ফুট উচু থেকে ঝরে পড়া পানি আর পাশের  পাথরের স্তরে রংধনুকের রঙ।


ছরার পাশে লতা রং বেরংয়ের ফুল আর গুল্মের সমাহার


খুঁজেপেতে মেক্সিকান খাবারের একটা দোকান পাওয়া গেল।পেট ঠান্ডা করাটাই লক্ষ্য।চিকেন কেসাডিয়া (quesadilla)আর চিকেন স্যুপ অর্ডার করা হল।এখানে খাবার বেশ সস্তা।মাত্র ৫ ডলারের স্যুপ দেখে ভাবলাম এটা হয়তো পরিমানে কম হবে।কিন্তু পরে সার্ভিং সাইজ দেখে আমাদের চোখ কপালে। আর তার ্উপর যখন ক্যাটারারকে বললাম স্যুপের বাটি দিনার দিকে দিতে।তার চোখের ভাজ দেখেই পেটের ভিতরের ভাষা স্পষ্ট পড়া গেল--- "খাইসে। এই মেয়ে এই বাটি শেষ করবে!!!"



দুজনে মিলে একবাটি স্যুপ আর কেসাডিয়ার একটু অংশ সাবাড় করে বাকিটা বক্স করে নিয়ে চললাম বিভার মার্শ।যাবার পথে কায়াহাগা টুরিস্ট ট্রেইন সার্ভিস আমাদের পথ রোধ করে 2 মিনিটের জন্য।



জিপিএস ধরে রিভারভিউ রোডে ১৫ মিনিট ড্রাইভ করে পৌছে যাই বিভার মার্শ এর ট্রেইল হেডে।

বিভার মার্শ : 

বিভার মার্শএর গল্পটা বেশ সুন্দর।নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে এই জলাশয়ের সাথে বিভারের যোগ আছে। শত বছর আগে পর্যন্ত কায়াহাগা ভ্যালিতে বিভারদের অভয়ারন্য ছিল। নগরায়নের ফলে মানুষের কাছে তারা হারায় তাদের আবাসস্থল।আর গায়ের লোমশ ফারের জন্য পড়ে শিকারীর ফাঁদে। বিংশ শতকের শুরুর দিকে বিভার ট্র্যাপিং নিষিদ্ধ করা হয়।ধীরে ধীরে বিভারের সংখ্যা বাড়তে থাকে।

বিভারদের একটা খুবই অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য আছে।এরা স্থপতি। এরা পানির মাঝে বা জলাশয়ের ধারে গাছের শুকনো লতাপাতা আর কান্ড দিয়ে ঘর তৈরী করতে পারে।সবচে অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে এরা এদের স্থাপত্য প্রতিভা দিয়ে নদী বা জলাশয়ে বাঁধ তৈরী করতে পারে।এবং তারা সেটা করে।আর তাই বৃষ্টির পানির প্রবাহের উপর বাঁধ তৈরী করে এরা নিজেদের সুবিধামত জলাশয় তৈরী করে নেয়।এরকম একটি জলাশয় হচ্ছে বিভার মার্শ।

বিভার ট্র্যাপিং নিষিদ্ধ হওয়ায় বিভাররা ফিরে এসে কায়াহাগা ভ্যালির এই অংশে জোয়ারের পানি আর জমে থাকা বৃষ্টির পানিকে কাজে লাগিয়ে থেকে এই মার্শের জন্ম দেয়।বিভারদের প্রচেষ্টার ফসল এই মার্শের নামও তাই বিভারদের নামে।

দর্শনার্থীদের জন্য বাধানো মেঠোপথের মধ্য দিয়ে মাঝে মাঝে কাঠের সেতু/বোর্ডওয়াক তৈরী করা আছে। এই ছবিটা বোর্ডওয়াকথেকে তোলা। কচুরিপানার মত দেখতে এই জিনিসগুলো আসলে শাপলাজাতীয় একধরনের ফুলের গাছ(?)।





অগভীর এই জলাশয়ে আছে ব্যাঙ, বিভিন্ন প্রজাতির মাছ, কচ্ছপ এবং পাখি। আর বিভার তো আছেই । ট্রেইল ধরে এগোতে থাকলে এক এক করে সবার সাথেই দেখা হয়। এখানে নাকি প্রায় ২৪০ প্রজাতির পাখি আছে।সবার সংগে দেখা হয় নি । একজন সারস আর বেশ কয়েক রকমের অজানা প্রজাতির পাখি।ভাল ক্যামেরা থাকলে অন্য পাখিগুলোর ছবি তোলার চেষ্টা করা যেত।





বোর্ডওয়াক পেরিয়ে বাধানো মেঠো পথের পাশে হালকা বেগুনি আর সাদা রংয়ের অসংখ্য ফুল।


একটু সামনেই এই ভ্যালির মূল নদী কায়াহাগা রিভার। যেমনটা ভেবেছিলাম তার তুলনায় বেশ ছোটই বলতে হবে নদীকে।নদীর পানিতে পা ভেজানোর লোভ দিনার।পথ থেকে সরে গিয়ে তাই নদীর পাড়ে গিয়ে দাড়াই আমরা। ডুবোচর চোখ পড়ে, একটু দূরে ছোট একটা ভেসে ওঠা চরে পরিযায়ী পাখির দেখা মেলে।পরিবেশের তাপমাত্রা ৯০° ফা হলেও পানি বেশ ঠান্ডা।

                            

                            


পথের উপর ভিসতা পয়েন্ট থেকেও একটা স্ন্যাপ নেয়া হল সেল ফোনের ক্যামেরায়। 

প্রচন্ড গরমে হেটে ক্লান্তি ছাপিয়ে অভিভূত মন ।





পথের ধারে জঙ্গলের ভেতর খামারি করছে কেউ।লোকজন নেই একা উদাস ফসলের ক্ষেত।




ফিরতি পথে দেখা মেলে বিভার মহরাজার।


বিভার মার্শ এর ট্রেইলহেডর এমাথা থেকে ওমাথা প্রায় ৩.৫ মাইলের ট্রেইল । মোট ৭ মাইল হেঁটে ক্লান্ত শরীর এবার একটু জিরোতে বা জুড়োতে চায়। তাই এবার ছুটে চলা লেক ইরির পাড়ে।

মার্বলহেড বাতিঘর:

লেক ইরির পাড়ে শান্ত সৌম্য এই বাতিঘরের ব্যাপারে লেখার ভাষা নেই। শুধু ছবি দিয়েই হয়তো বোঝানো সম্ভব কতটা মোহনীয় এই এলাকা।













বাতিঘর থেকে আমাদের ফেরার পথ প্রায় ২২০ মাইল। ফিরতি পথে highway 163 এর উপর Dairy Dock নামে স্থানীয় একটা আইসক্রিমের দোকানে লম্বা লাইন দেখে গাড়ি থামাই। vanilla-orange serbet twist নামের এই আইসক্রিমের স্বাদ অভূলনীয়।




এর পর শুধুই বাড়ি ফেরা। ৪ ঘন্টার একটানা পথচলা।


Memorial Weekend## May 28, 2016 ## Saturday

Related Posts:

  • অডিয়েসেলারিয়ো জোছনা বিলাস ... adiyeselarinus Lunatismus .... শুক্লপক্ষের পঞ্চদশ তিথি [ ফেব্রুয়ারির ২২, ২০১৬] Photcredit: Pentax XG-1  at 36.1X zoom … Read More
  • বন্ধু দিবস ২০১৫ Hiking জিনিসটা আমি আজকেই প্রথম করছি না।তারপরও এই ব্যাপারটায় আমার পা ঠিক অভ্যস্ত হয়ে উঠতে পারেনি। প্রত্যেকবার শেষ কয়েক মাইল আমাকে মচকানো হাঁটু নিয়ে খুড়িয়ে শেষ করতে হয়েছে। মূল প্রসংগ সেটা নয়। বরাবরে… Read More
  • অসমাপ্ত আত্মজীবনি : শেখ মুজিবুর রহমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আত্মজীবনি পড়া শেষ করলাম। তার নিজের হাতে লেখা ও তার মেয়েদের হাতে সম্পাদিত বইটিতে তার রাজনৈতিক জীবনের প্রথম দিকের দিনলিপি এখানে তিনি তুলে ধরতে সচেষ্ট হয়েছেন । তার লেখার ভঙ্… Read More
  • পয়লা বৈশাখ -প্রবাসি শ্রমিকের দপ্তর থেকে আমি আমেরিকায় অবতীর্ন হই কলম্বাসের ৫১৮ বছর পর। প্রথম যে ফাস্টফুড খাই তার নাম চিকেন বুরিতো।একটা মেক্সিকান খাবার, রুটির ভেতর ভাত আর টমেটোর প্রলেপ দেয়া সিদ্ধ মাংস। অর্ডার দেবার সময় কাউন্টারের ভদ্রলোক জ… Read More
  • Review: কবি : Humayun Ahmed এই বইয়ের রিভিউ লেখার সাধ্য আমার নাই।তবে অনুভুতির তরজমা তো করতেই পারি। এই উপন্যাস একাধিক ব্যর্থ মানুষদের উপাখ্যান। রশীদ সাহেব মেয়ের বিয়ে দিতে পারছেন না , ডিগ্রীধারি বেকার দুই ছেলে সহ এক পরিবা… Read More

0 comments:

Post a Comment